Home Second Lead সাব্বির ট্রেডিং’র ছগীর সা’ব

সাব্বির ট্রেডিং’র ছগীর সা’ব

  • সরল বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে পার্টনাররা পুঁজি মেরে দিয়েছেন
  • মশলার ব্যবসা সবচেয়ে সফলতা দিয়েছে
  • লবিং স্ট্রং ছিল না বলে রাজনীতিতে এগিয়ে যেতে পারিনি

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম: খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী, চিটাগাং চেম্বার পরিচালক সৈয়দ ছগীর আহমদ। তবে, সবচেয়ে বেশি পরিচিতি সাব্বির ট্রেডিং-এর ছগীর সা’ব হিসেবে।

তিন যুগের বেশি সময় ধরে জড়িত ব্যবসার সাথে। সেই সঙ্গে রাজনীতি এবং ট্রেড অর্গানাইজেশনের সঙ্গেও। আমদানি করেছেন বিভিন্ন পণ্য, করেছেন ডিও’র কারবারও। কখনও লাভ করেছেন, কখনও লোকসানে একেবারে ফতুর হয়েছেন। সরল বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে পার্টনাররা পুঁজি মেরে দিয়েছেন এমন ঘটনাও রয়েছে। তবে, মশলার ব্যবসা সবচেয়ে সফলতা দিয়েছে এবং তা শুরুর পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি বলে জানালেন একান্ত আলাপচারিতায়।

ছগীর আহমদ-এর দাদা ছিলেন সেই ব্রিটিশ আমলে পেশকার।  সৈয়দ আমান আলী পেশকার। আদি বাড়ি ফটিকড়িতে, আমান আলী পেশকার বাড়ি। নগরীর বাকলিয়ার সৈয়দ শাহ রোডটি তাদের পূর্বপুরুষের নামে। বাবা ছিলেন চট্টগ্রামের তদানীন্তন ইস্টার্ন এক্সামিনার-এর সাব-এডিটর। তুখোড় ইংরেজি জানা একজন। বাবার রেডিমেইড কাপড়ের ব্যবসা ছিল টেরিবাজারে। কলকাতা থেকে এনে বেচতেন। তবে, খাতুনগঞ্জে ব্যবসা শুরু করেন ছগীর আহমদই প্রথম।

সৈয়দ ছগীর আহমদ

জানালেন, ১৯৮৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে নিউমার্কেটে ভাইয়ের সাথে ব্যবসায় যোগ দেন। এরপর  ১৯৮৭ সালে খাতুনগঞ্জে একজনের অফিসে বসে ব্যবসায় নামেন। সেটা ছিল পেঁয়াজের আড়ৎ। তখন ডিও ( ডেলিভারি অর্ডার ) ব্যবসা ছিল বেশ জমজমাট। ডানপিস বিক্রি হতো কেজি ৭/৮ টাকা। হলুদের ব্যবসাও করেছেন। ডানপিসের ব্যবসা করতে গিয়ে পলাশ ট্রেডিং নামে এক প্রতিষ্ঠানের কাছে সাড়ে ৯ লাখ টাকা পুঁজির সবটা চলে যায়। টাকা মেরে দিয়ে পালিয়ে গেছে পলাশ ট্রেডিং। ব্যবসা শুরুর এক বছরের মধ্যে এ পরিস্থিতির মুখে পড়েন। চরম দুর্বিপাকে পড়ে যান।

ছগীর আহমদ জানান, চট্টগ্রামের বনেদী এক আবাসিক হোটেল মালিকের মেয়ে তাকে ছেলের মত  স্নেহ করতেন। ৪ লাখ টাকা দেন আবার ব্যবসা শুরু করার জন্য। নবী মার্কেটের দোতালায় আবার একজনের সাথে ব্যবসায় নামেন। ব্যবসা মানে ডিও ব্যবসা। তেমন সুবিধা করা যায়নি। ১৯৯২ সালে প্রথমবারের মত আমদানি করেন দু’কন্টেইনার ট্যালো। মুনাফা হয় আড়াই লাখ টাকা। পরবর্তী চালানে লোকসান হয় ৩ লাখ টাকা।

আমদানি করা মাল বেচে দিতো অন্যজন। সেখানেও তিনি প্রতারণার শিকার হন। তাকে ‘লোকসানের মাল’ ধরিয়ে দেয়া হতো।

সাব্বির ট্রেডিং-এ ব্যবসার সূচণা হয় ১৯৯৫ সালে। সে বছর আগস্টে বাংলাদেশ-মিয়ারনমার বাণিজ্য চুক্তি হয়। মাল আসতো আর সাব্বির ট্রেডিং কমিশনে তা বেচে দিতো। কমিশন ব্যবসায় বেশ ভাল করেন সৈয়দ সগীর আহমদ। আবার আমদানি শুরু করেন ২০০০ সালে।

সুপারি, কালজিরা, মিঠাজিরা, চিকন জিরা, দারুচিনি, লবঙ্গসহ হরেক রকম মশলা আমদানি করেন। ব্যাপক ব্যবসায়িক সফলতা পেয়েছেন এখানে, তা ধরে রেখেছেন।

ছগীর আহমদ জানান, ‘টায়ার ব্যবসায় অংশীদারদের কাজে কোনরকম হস্তক্ষেপ ছিল না, অগাধ বিশ্বাস ছিল তাদের ওপর। কিন্তু তারা বিশাল কারচুপি, গোঁজামিলের আশ্রয় নিয়ে একেবারে ‘হাত ধুয়ে’ দিয়েছেন। ২০১৭ সালে সেখান থেকে সরে  আসি।’ সেটা আজও আমাকে কষ্ট দেয়।

সেই ছাত্রাবস্থায় শুরু রাজনীতির। তখন তিনি অষ্টম শ্রেণির ছাত্র বাকলিয়া সরকারি হাইস্কুলের। ১৯৭৫ সালের পর বৃহত্তর বাকলিয়া ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। বললেন, সে সময়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নাম নেয়াটা ছিল মুসিবতের। ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত এই পদে ছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালেও ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।  বাকলিয়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন। তবে, বর্তমানে রাজনীতিতে তেমন জড়িত না। সংসদ নির্বাচন, মেয়র নির্বাচনে এলে তখন সক্রিয় হন এবং দলীয় প্রার্থির জন্য কাজ করেন। মরহুম এম এ মান্নান,  এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী , আখতারুজ্জামান  চৌধুরী (বাবু ) প্রমুখের সান্নিধ্যে থেকে রাজনীতি করেছেন বলে জানান। বললেন, ‘ লবিং স্ট্রং ছিল না বলে রাজনীতিতে এগিয়ে যেতে পারিনি।’

খাতুনগঞ্জ ট্রেড এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমদ। ২০০৫ সালে ছিলেন সংগঠনের সচিব। তখন সভাপতি ছিলেন হেফাজতুররহমান। চিটাগাং চেম্বারের ৫ বারের পরিচালক সগীর। ২০০৮ সালে প্রথম বার পরিচালক হন। তবে, আরও আগে ছিলেন মেট্রোপলিটন চেম্বারের আহ্বায়ক। প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরী যখন এই চেম্বার গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন তখন কিছুদিনের জন্য ছিলেন আহ্বায়ক।

ছগীর আহমদ বিভিন্ন সময়ে দোকান মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, মহানগর কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন। তবে, খাতুনগঞ্জ ট্রেড এসোসিয়েশন সবচেয়ে বেশি পরিচিতি এনে দিয়েছে বলে উল্লেখ করে বলেন, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ হয়েছে এই পদবী ব্যবহার করে।

২ ছেলে ও এক মেয়ের জনক ছগীর আহমদ। ব্যবসায়িক প্রয়োজনে তিনি বহুদেশে গেছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে চিন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, দুবাই, তুরস্ক, গুয়াতেমালা, আফগানিস্থান, ভারত, মিসর ইত্যাদি।