Home ব্যাংক-বিমা এগিয়ে যাচ্ছে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং

এগিয়ে যাচ্ছে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং

প্রচলিত ধারার ব্যাংকিংয়ের চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং। আমানত ও ঋণের হিসাবে এক-চতুর্থাংশই ইসলামিক ধারার ব্যাংকগুলোর দখলে রয়েছে। এ দুইটি সূচকের মাধ্যমেই বোঝা যায় একটি ব্যাংক কত বড়ো। অন্যদিকে যেসব সূচকের মাধ্যমে ব্যাংকের শক্ত অবস্থান প্রকাশ করে সেসব সূচকেও শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো এগিয়ে রয়েছে। ইসলামি ব্যাংক নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি প্রতিবেদন তেমনই তথ্য দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে—গেল সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইসলামি ব্যাংকিংয়ে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬২ হাজার ১১০ কোটি। যেখানে দেশের ব্যাংকগুলোতে মোট আমানতের পরিমাণ ১০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। অর্থাত্ ইসলামি ধারার ব্যাংকিংয়ে আমানত মোট আমানতের প্রায় ২৪ ভাগ।বর্তমানে দেশে ৫৯টি ব্যাংক রয়েছে। এরমধ্যে পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংকিং কার্যক্রম করে আটটি ব্যাংক। এ ছাড়া ৯টি প্রচলিত (কনভেনশনাল) ব্যাংকের ১৯টি শাখা এবং আটটি প্রচলিত ব্যাংকের ৬১ উইন্ডো রয়েছে। এর বাইরে দেশের সব ব্যাংক ও শাখা প্রচলিত ধারার। অর্থাত্ ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর যেখানে চার ভাগের এক ভাগ দখলে রয়েছে সেখানে অন্য সব ব্যাংক মিলে তিন ভাগ।

একইভাবে ইসলামি ব্যাংকিংয়ে বিনিয়োগের পরিমাণও বেড়েছে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণের স্থিতি ছিল ১০ লাখ ১৭ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের বিনিয়োগ ২ লাখ ৫০ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা। যা মোট বিনিয়োগের প্রায় ২৫ শতাংশ।

রেমিট্যান্স আহরণেও শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো বড়ো ভূমিকা রাখছে। এ ধারার ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৩১ শতাংশের রেমিট্যান্স আসে। কৃষি ঋণের ক্ষেত্রেও ভালো ভূমিকা রাখছে।

প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামিক ব্যাংকিং বাড়াচ্ছে পূবালী ব্যাংক। এ ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম আযিযুল ইসলাম বলেন, মুসলিম দেশগুলোতে ইসলামিক ব্যাংকের ব্যাপক চাহিদা আছে। কোরআনের নিয়ম মেনে যারা ব্যবসায়-বাণিজ্য ও লেনদেন করতে চান তারা সাধারণত ইসলামিক ব্যাংকগুলোতে লেনদেন করেন। তিনি বলেন, দেশের ৯০ ভাগ ব্যাংক গ্রাহক মুসলমান। একারণেই দেশের ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের পরিধি দিন দিন বাড়ছে।

বাস্তবভিত্তিক ব্যাংকিং এবং যথাযথ নিয়ম মেনে ঝুঁকি মোকাবিলা করার কারণে টেকসই ব্যাংকিং হিসেবে ইসলামি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে বলে মনে করছেন ইসলামি ধারার ব্যাংক পরিচালনাকারীরা। তারা বলছেন, এরই ধারাবাহিকতায় ইসলামি ব্যাংকগুলোর সাফল্য দেখে এর প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। এ আগ্রহ শুধু মুসলিমপ্রধান দেশে হচ্ছে তা নয়, অমুসলিম প্রধান রাষ্ট্রেও ইসলামি ব্যাংক গ্রহণযোগ্য হচ্ছে। ব্যাবসায়িক মুনাফা নয়, সমাজ উন্নয়ন ও মানবতার সেবাই ইসলামি ব্যাংকিংয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য।

বাংলাদেশের আটটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংক হলো—ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ফার্স্ব সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেড, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট ব্যাংক অব বাংলাদেশ লিমিটেড (এক্সিম), সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ও ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড।

১৯৮৩ সাল থেকে দেশে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে একটি গাইডলাইন তৈরি করে।