দিল্লি: মঙ্গলবার ঘটা করে রাজাভাতখাওয়া শকুন প্রজনন কেন্দ্র থেকে ছয় শকুনকে খোলা আকাশে ছেড়ে দিয়েছিল রাজ্য বনদফতর। কিন্তু এখনও রাজাভাতখাওয়ার জঙ্গল ছেড়ে যায়নি সেই ছয় শকুন। উলটে তারা খাঁচাতেই ফিরে আসছে বলে জানা গিয়েছে।
ছয় শকুনের মধ্যে তিনটে শকুন সামান্য কিছুক্ষণের জন্য বের হলেও ফের এসে ঢুকেছে ২০ ফুট উঁচু এবং ৩০ ফুট বাই ৯০ ফুটের লোহার পিঞ্জরে। আর অন্য তিনটি আকাশে উড়ে গেলেও ফের এসে ঢুকে পড়েছে খাঁচাতে।
রাজাভাতখাওয়া শকুন প্রজনন কেন্দ্রের পক্ষী বিশারদ সৌম্য চক্রবর্তী বলেন, “এখন এমনিতেই শীতকাল। এই সময় হিমালয়ান গ্রিফন প্রজাতির শকুন সমতলের দিকে চলে আসে। ফলে এই সময় এই পাখিগুলো সমতলে থাকতেই পছন্দ করবে। কখন কবে এগুলো এখান থেকে উড়ে যাবে তা বলা খুব শক্ত। যে ছয় শকুনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে সেগুলোর সব গুলোই আমাদের এই অঞ্চল থেকেই উদ্ধার হয়েছিল। এক সময় এরা খোলা আকাশেই উড়ে বেড়াত। ফলে খোলা আকাশে এদের উড়ে যেতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে আমরা এই ছয় শকুনের উপর নজর রাখছি। বক্সায় তৈরি রিলিজ এভিয়ারির আশপাশেই থাকছে এই ছয় শকুন। আমরা তাদের খাবারেরও ব্যবস্থা করছি।”
শকুনের বিলুপ্তির কারণে গোটা বিশ্বে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। আর সেই কারণেই শকুনকে বাঁচিয়ে রাখার নানান উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ২০০৬ সনে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের রাজাভাতখাওয়া রেঞ্জের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে শকুন প্রজনন কেন্দ্রে চালু হয়। বিভিন্ন জায়গা থেকে বিলুপ্তপ্রায় শকুন উদ্ধার করে এই প্রজনন কেন্দ্রে রেখে তাদের বংশ বৃদ্ধি করা শুরু হয়। বর্তমানে রাজাভাতখাওয়া শকুন প্রজনন কেন্দ্রে স্ল্যান্ডার বিল্ড, লং বিল্ড, হোয়াইট ব্যাক বিল্ড এবং হিমালয়ান গ্রিফন-এই চার প্রজাতির মোট ১৩০ টি শকুন রয়েছে।
পক্ষী বিশারদরা জানান, গবাদি পশুর ব্যথা উপশমের জন্য ডাইক্লোফেনাক নামে একটি ওষুক পশুর শরীরে ব্যবহার করা হয়। মরা পশুর দেহ থেকে এই ওষুধ শকুনের শরীরের প্রবেশ করলে ৭২ ঘন্টার মধ্যে শকুনের মৃত্যু হয়। তার জেরেই পরিবেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এই পাখি। ফলে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। মঙ্গলবার রাজভাতখাওয়ার শকুন প্রজনন কেন্দ্র থেকে শকুনদের আকাশে উড়িয়ে দেওয়ার সময় সেখানে হাজির ছিলেন রাজ্যের বনমন্ত্রী সহ বনদফতরের সমস্ত পদাধিকারিকরা। কিন্তু খাঁচার পাখি যে খাঁচাতেই থাকতে চায় কে তা জানত?
তবে এই ঘটনাকে অস্বাভাবিক কিছু মনে করছে না পক্ষী বিশারদরা। পক্ষী বিশারদ শচীন রানাডে বলেন, “এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। সেই কারনেই এই প্রক্রিয়াকে আমরা বলেছিলাম ‘সফট রিলিজ’। অর্থাৎ আস্তে আস্তে শকুনগুলো পরিবেশে মিশে যাবে। কিছু সময় লাগবে। তবে ঠিক কতদিনের মধ্যে এরা পরিবেশে মিশবে তা বলা সম্ভব নয়।”