যশোরের কেশবপুর উপজেলায় মোট ১৭টি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে পৌর সদরেই ২টি। কৃষি জমিতে গড়ে ওঠা এ সব ইট ভাটায় ব্যপক বায়ুদূষণ হলেও দেখার কেউ নেই। এলাকাবাসী অবৈধ এসব ইটভাটা বন্ধসহ ভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বিভিন্ন সূত্রে জানাযায়, বেশীভাগ ইট ভাটাগুলো বৈধ কাগজ পত্র ছাড়া যেনতেন ভাবে গড়ে ওঠায় একদিকে সরকার যেমন রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি এলাকার বায়ুদূষণ দিন দিন বাড়াসহ ফসল উৎপাদনেও এর বিরুপ প্রভাব পড়ছে।
সরকারি বিধি অনুযায়ী পৌরসভা সীমানার মধ্যে ব্রিকস নির্মাণে সরকারি ভাবে কোন অনুমতি না থাকলেও ইট উৎপাদন করছে খান ব্রিকস। এরপর ২০১৮ সালে কেশবপুর পৌর সদরের ভোগতি নরেন্দ্রপুরে ঘনবসতি পুর্ণ এলাকায় নতুন করে ভাবে জামান ব্রিকস নামে আরেকটি ইটভাটা নির্মাণ করেন ওই গ্রামের মমতাজ বেগম। তার ভাটায় ছবি তুলতে গেলে তিনি ছবি তুলতে বাধা দেন। অবৈধ জামান ব্রিকস, রোমান ব্রিকস ও সুপার ব্রিকস গত বছর স্থানীয় প্রশাসন বন্ধ করে দিলেও চলতি বছর আবার তা চালু করা হয়েছে। এদিকে বায়ুদূষন রোধে ভাটার চিপনি ১২০ ফুট উচু করে নির্মাণ করার কথা থকলেও কোন কোন ইট ভাটার মালিক তা ৪০ থেকে ৬০ ফুট উচু করে নির্মাণ করেছেন। এছাড়া ভাটার চিপনি ভাটার ক্লিনের একপাশে স্থাাপনসহ তার ভিতরের অংশে পানি রাখার ব্যবস্থা রাখার নিয়ম থাকলেও তারা তা মানছেন না। পানির ব্যবস্থা রাখলে কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি কম হয়। এতে পরিবেশ বান্ধব (সাদা) ধোয়া বের হয়। তবে ভাটার অসাধু ব্যবসায়ীরা আইনের প্রতি তোয়াক্কা না করে, তাদের ভাটার চিপনি মাঝখানে স্থাপন করেছেন। এতে বায়ুদূষণ দিন দিন বাড়ছে।
কেশবপুর পৌর শহরের ভোগতি নরেন্দ্রপুর মহল্লায় জামান ব্রিকস, বালিয়াডাঞায় খান ব্রিকস, বায়সা–কালিবাড়ি গাজি ব্রিকস ও গোল্ড ব্রিকস, সন্নাসগাছা বিউটি–১, বিউটি–২, বগা গ্রামে ডি এস বি ব্রিকস, বারইহাটি গ্রামে রোমান ব্রিকস, মির্জানগরে রহমান ব্রিকস ও আলম ব্রিকস, সাতবাড়িয়ায় সুপার ব্রিকস, গৌরিঘোনায় এস এসবি ব্রিকস, বেগমপুরে রিপন ব্রিকস, জাহানপুরে কেশবপুর ব্রিকস, আগরহাটি গ্রামে হামজা ও প্রান ব্রিকসসহ মোট ১৭টি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে ১২টিই অবৈধ।
এসব ভাটা গুলি বিদ্যালয়, তিন ফসলের জমি, সরকারি সড়কসহ ঘণবসতিপুর্ণ এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ফসলের ক্ষতিসহ কোমলমতি শিশু এবং এলাকার মানুষরা স্বাসকষ্ঠসহ দুষণজণিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। ঘটনাস্থল পরিদর্শণ কালে অবৈধ ভাটা নির্মাানের ব্যপারে জানতে চাইলে অধিকাংশ ভাটার মালিক এ ব্যাপারে মুখ খুলতে চাননি। এলাকাবাসী অবৈধ এসব ইটভাটা বন্ধসহ ভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্হা নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন, ভাটার বায়ুদূষণের ফলে কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এসব অবৈধ ভাটা বন্ধ করার জন্য তিনি সরকারের প্রতি দাবী জানান। কলেজ শিক্ষার্থী জয় বলেন, ভাটার বায়ুদূষণের ফলে স্বাসকষ্টসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এলাকাবাসি। পৌর সদরের মধ্যে অবৈধ ভাটা নির্মাণের ব্যপারে মমতাজ বেগমের নিকট জানতে চাইলে ভাটার ব্যাপারে তার ভাই বক্তব্য দিবেন বলে সাংবাদিকদের জানান।
রোমান ব্রিকস‘র মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, লাইন্সেস না থাকার কারণে গত বছর স্থানীয় প্রশাসন আমার ভাটাটি বন্ধ করে দেন। এবছর লাইন্সেস ছাড়াই চালু করেছি। তবে ভাটা নির্মাণের অনুমতির জন্য সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে আবেদন করেছি। কেশবপুর ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি, খান ব্রিকসের মালিক নজরুল ইসলাম খান বলেন, কেশবপুরে ১৭টি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে কয়েকটি ভাটার বৈধ কাগজ পত্র থাকলেও অন্য গুলির আবেদন প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহাদেব চন্দ্র সানা বলেন, কেশবপুরে মোট ১৭টি ইটের ভাটা রয়েছে। এসব ভাটার কারনে পরিবেশ দূষন হওয়ার ফলে ফসল উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুসরাত জাহান বলেন, কেশবপুরের অবৈধ সকল ইটভাটার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।