Home ব্যবসায়ী সংগঠন সিঙ্গেল ডিজিট সুদ বাস্তবায়নে সুশাসন নিশ্চিত জরুরি :ডিসিসিআই

সিঙ্গেল ডিজিট সুদ বাস্তবায়নে সুশাসন নিশ্চিত জরুরি :ডিসিসিআই

ঋণের উচ্চ সুদ হার ও খেলাপি ঋণ অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে বেশির ভাগ ব্যাংক ১১ থেকে ১৫ শতাংশ হারে সুদ নিচ্ছে। এত উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসায়ী ব্যবসা করতে পারছেন না। তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।

সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার বাস্তবায়ন করতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে হবে। এজন্য সুশাসন নিশ্চিতের কোনো বিকল্প নেই। রাজধানীর মতিঝিলে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শনিবার এসব কথা বলেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি ওসামা তাসীর। বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ চিত্র তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে বেসরকারি বিনিয়োগ, কৃষি, উৎপাদন খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, ব্যাংক খাত ও বন্দর পরিস্থিতির বর্তমান অবস্থা তুলে ধরা হয়।

ওসামা তাসীর বলেন, আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে রফতানি বাড়ছে। কিন্তু এখন ব্যবসায়ীরা ভালো নেই। কারণ উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করছে ঠিকই, কিন্তু লাভবান হচ্ছেন না। এছাড়া বেশি সুদের কারণে খরচ বাড়ছে, ফলে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। তাই সিঙ্গেল ডিজিট সুদ বাস্তবায়নে সুশাসন নিশ্চিতের কোনো বিকল্প নেই।

খেলাপি কমাতে হলে ইচ্ছাকৃত-অনিচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ না কমালে সুদহার কমানো কঠিন হবে। আর্থিক খাতে ঋণপ্রবাহ সম্পর্কে তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি, ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীদের সঞ্চয় জাতীয় সঞ্চয়পত্রের দিকে ধাবিত হওয়ার কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ সংকুচিত হয়েছে। এজন্য খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে করের আওতা বৃদ্ধি করা হলে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। এতে সরকারের ব্যাংক খাত থেকে ঋণ গ্রহণ প্রবণতা হ্রাস পাবে। যা বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

গ্যাস-বিদ্যুৎ খাতে নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়ে ওসামা তাসীর বলেন, অপর্যাপ্ত গ্যাস অনুসন্ধান অন্যান্য তরল জ্বালানি আমদানি নির্ভরতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। স্থিতিশীল ও অনুমানযোগ্য প্রাথমিক জ্বালানি মিশ্রণ ও মূল্য নির্ধারণে নীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন। এছাড়া অনুসন্ধান ও বিতরণ নীতিমালা স্বল্প, মধ্য, দীর্ঘমেয়াদি এবং নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী করতে হবে। স্থানীয় অনুসন্ধানকারী ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে আরও বেশি সক্ষম করতে হবে এবং তারা যাতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।

বন্দরের সেবা উন্নয়নে ‘জাতীয় সমুদ্র ও বন্দর কর্তৃপক্ষ’ নামে একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা স্থাপনের পরামর্শ দিয়ে ওসামা তাসীর বলেন, প্রধান প্রধান সমুদ্রবন্দরগুলোতে কনটেইনার ব্যবস্থাপনার উন্নতি সাধন সত্ত্বেও বন্দরের স্বল্প-গভীরতা, পলি, কনটেইনার ব্যবস্থাপনার কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির অপর্যাপ্ততা, পশ্চাদভূমির সঙ্গে যোগাযোগ বন্দরের অবকাঠামোর অন্যতম প্রতিবন্ধকতা। দীর্ঘ পণ্য খালাস প্রক্রিয়া, সমন্বয়ের অভাব, পণ্য পরিদর্শনে ভোগান্তি, দালিলিক কার্যক্রম এবং অনুমোদনে দীর্ঘসূত্রতা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ‘লিড টাইম’ বৃদ্ধি করে দেয়। বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে বন্দর সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নে ‘জাতীয় সমুদ্র ও বন্দর কর্তৃপক্ষ’ নামে একটি একক বন্দর উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা স্থাপন করা যেতে পারে।

সুশাসনের অভাবে পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে দাবি করে ওসামা তাসীর বলেন, পুঁজিবাজার দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য সুশাসনের পাশাপাশি মার্কেট স্থাপন ও মিউচুয়াল ফান্ডের ব্যবহার উৎসাহিত করতে হবে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের এসএমই প্ল্যাটফর্ম কার্যকর ব্যবহার করে এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে বাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করতে পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

পোশাক খাত নিয়ে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, উচ্চ পরিবহন ব্যয় ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ফলে পোশাক খাতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি।

তাই পোশাক খাতে রফতানির ধারাবাহিকতা রক্ষায় আগামী তিন বছর ৩ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিতে হবে। পাশাপাশি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধা কাজে লাগাতে পোশাক খাতের শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়াতে হবে।

এছাড়া রফতানি বহুমুখীকরণের পরামর্শ দিয়ে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, বর্তমানে রফতানি খাত পোশাক শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। একটি খাতের ওপর রফতানি নির্ভরশীল হলে তাতে দীর্ঘমেয়াদে ভালো ফল আসে না। তাই বিভিন্ন খাতে সক্ষমতা বাড়িয়ে রফতানি আয় বাড়াতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিসিসিআই’র সিনিয়র সহসভাপতি ওয়াকার চৌধুরী, সহসভাপতি ইমরান আহমেদ প্রমুখ।