আন্তর্জাতিক ডেস্ক:‘ঘুমন্ত রাজপুত্র’ হিসেবে পরিচিত সৌদি রাজপরিবারের প্রিন্স আল-ওয়ালিদ বিন খালেদ বিন তালাল প্রায় ২০ বছর কোমায় থাকার পর অবশেষে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। শনিবার (১৯ জুলাই) তাঁর মৃত্যু সংবাদ নিশ্চিত করেন তাঁর বাবা প্রিন্স খালেদ বিন তালাল।
জানা গেছে, রোববার আসরের নামাজের পর রিয়াদের ইমাম তুর্কি বিন আব্দুল্লাহ মসজিদে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
২০০৫ সালে যুক্তরাজ্যে পড়াশোনাকালীন এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হন প্রিন্স আল-ওয়ালিদ। দুর্ঘটনার পর থেকেই তিনি গভীর কোমায় ছিলেন। চিকিৎসকেরা বহু আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁর আর জেগে ওঠার কোনো সম্ভাবনা নেই এবং লাইফ সাপোর্ট বন্ধ করার পরামর্শও দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর বাবা প্রিন্স খালেদ এই পরামর্শে সায় দেননি। তিনি বরং বলেন, “আল্লাহ যদি চাইতেন, দুর্ঘটনার দিনই ও মারা যেত।”
সেই বিশ্বাস থেকেই ছেলেকে লাইফ সাপোর্টে রেখেছিলেন প্রিন্স খালেদ। রিয়াদের কিং আব্দুল আজিজ মেডিকেল সিটিতে একটি বিশেষ চিকিৎসক দল দুই দশক ধরে প্রিন্স আল-ওয়ালিদের চিকিৎসা চালিয়ে গেছেন। তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্রনির্ভর, খাবার দেওয়া হতো নল দিয়ে।
২০১৯ সালে তাঁর আঙুল নড়েছিল, মাথা সামান্য কাঁপিয়েছিলেন—এই ক্ষণিকের সাড়া পরিবারসহ গোটা রাজ্যজুড়ে নতুন আশার সঞ্চার করেছিল। তবে এরপর আর তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। সৌদি আরবসহ গোটা মুসলিম বিশ্বে তাঁর জন্য দোয়া ও সহমর্মিতা প্রকাশ করতে দেখা গেছে অসংখ্য মানুষকে।
সম্প্রতি তাঁর ৩৬তম জন্মদিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন তিনি। অনেকেই তাঁর পরিবারের সঙ্গে ছবি শেয়ার করেন, জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান, দ্রুত সুস্থতার কামনা করেন।
প্রিন্স আল-ওয়ালিদ সৌদি আরবের বর্তমান বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজের ছেলে বা ভাই না হলেও রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন। তাঁর দাদা, প্রিন্স তালাল বিন আব্দুল আজিজ ছিলেন আধুনিক সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা বাদশা আব্দুল আজিজের ছেলে। অর্থাৎ, প্রিন্স আল-ওয়ালিদ ছিলেন ওই প্রতিষ্ঠাতার প্রপৌত্র।
একটি দীর্ঘ প্রতীক্ষা ও আশা-নির্ভর যন্ত্রণার অবসান ঘটিয়ে ‘ঘুমন্ত রাজপুত্র’-এর জীবন পরিসমাপ্তি হলো। তাঁর মৃত্যুতে সৌদি আরবসহ বিশ্বজুড়ে সহানুভূতির ঢল নেমেছে।