Home আকাশ পথ চাঁদের দেশে পাড়ি দিয়েছে ইসরোর চন্দ্রযান

চাঁদের দেশে পাড়ি দিয়েছে ইসরোর চন্দ্রযান

চন্দ্রযান-৩

পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে অবশেষে চাঁদের পথ ধরল চন্দ্রযান-৩ (Chandrayaan-3)। পাঁচ বার পৃথিবীর চারদিকে চক্কর কেটে এখন চাঁদের দেশে পাড়ি দিয়েছে ইসরোর চন্দ্রযান। আজ ১ অগস্ট চাঁদের পথে পা রেখেছে তৃতীয় চন্দ্রযান। সব ঠিক থাকলে আগামী ২৫ অগস্ট চাঁদের দক্ষিণ পিঠে অবতরণের প্রক্রিয়া শুরু হবে। চন্দ্রপৃষ্ঠের ৩০ কিমি উপর থেকে হাল্কা পালকের মতো নেমে (সফট ল্যান্ডিং) আসবে তৃতীয় চন্দ্রযানের বিক্রম। এই সফট ল্যান্ডিং প্রক্রিয়াতেই গোলমাল হয়েছিল দ্বিতীয় চন্দ্রযাত্রার সময়। এই বাধা কাটিয়ে উঠতে পারলেই চাঁদের মাটিতে ভারতের জয়যাত্রার ইতিহাস রচিত হবে। বিক্রম ধীরেসুস্থে নামিয়ে আনবে রোভার প্রজ্ঞানকে। এরপর প্রজ্ঞান চাঁদের পিঠে ঘুরে বেরিয়ে নুড়ি-পাথর-মাটি কুড়িয়ে আনবে।

ইসরো জানিয়েছে, মোট পাঁচ বার পৃথিবীকে পরিক্রমা শেষে চাঁদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে চন্দ্রযান-৩ Chandrayaan-3)। নির্দিষ্ট অবস্থানে এসে চাঁদের দিকে গতিপথ নির্দিষ্ট করেছে। এটিই লুনার ট্রান্সফার ট্রাজেক্টরি ( Lunar Transfer Trajectory)। গতকাল পৃথিবীর পঞ্চম তথা শেষ কক্ষপথে অবস্থান করছিল চন্দ্রযান-৩ (Chandrayaan-3)। আজ মঙ্গলবার থেকে চাঁদের দিকে এটিকে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। অঙ্ক মেনে চন্দ্রযান প্রবেশ করেছে চাঁদের কক্ষপথে।

Image - পৃথিবীর প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে বেরিয়ে গেল চন্দ্রযান-৩, পরের স্টপেজ সোজা চাঁদে

ট্রান্সলুনার ইঞ্জেকশনে চন্দ্রযান ৩-এর Chandrayaan-3) প্রপালশন চালু করে তার গতি অত্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, যাতে সেটি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের বাধা কাটিয়ে চাঁদের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। তবে গতি এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে যাতে সঠিক পথে চাঁদের দিকে এগোতে পারে চন্দ্রযান-৩। এই হিসেবে গড়মিল হলে কক্ষচ্যুত হয়ে চন্দ্রযান চাঁদ পেরিয়ে মহাশূন্যে হারিয়ে যেতে পারে।

চাঁদের দক্ষিণ মেরু অভিযানের এই জার্নিটা মোটেও সহজ কাজ নয়, ইসরো যদি সফল হয় মহাকাশ গবেষণার এক নতুন দিগন্ত খুলে যাবে। দ্বিতীয় চন্দ্রযাত্রা পুরোপুরি সফল হয়নি। অরবিটার চাঁদের কক্ষে পৌঁছলেও ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদের মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে। ফলে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ইসরোর ঐতিহাসিক চন্দ্রযাত্রা (Chandrayaan-3) ব্যাহতই হয়। এবারে আবারও নতুন চ্যালেঞ্জ।

আগামী কয়েকদিন চাঁদের পথ ধরে এগিয়ে যাবে চন্দ্রযান-৩। এর প্রপালসন মডিউল সক্রিয় হয়ে উঠবে। এটি ল্যান্ডার থেকে আলাদা হবে। চাঁদের ১০০ কিলোমিটার উপরের কক্ষপথে স্থাপন করা হবে চন্দ্রযানকে। ১৭ অগস্ট প্রপালসন সিস্টেম ল্যান্ডার-রোভার থেকে আলাদা হয়ে যাবে। ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে, চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে অবতরণ করবে চন্দ্রযান ৩-র ল্যান্ডার এবং রোভার। ৭০ ডিগ্রি দ্রাঘিমায় অবতরণ করার কথা এই মহাকাশযানের। এই এলাকাটি চাঁদের দক্ষিণ মেরু থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখনও পর্যন্ত যে তিনটি দেশ চাঁদে পা রেখেছে, তাদের কেউই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করতে পারেনি। চাঁদের নিরক্ষীয় অঞ্চলের কাছে অবতরণ করেছে তারা।

ল্যান্ডিং প্রপালশন মডিউল আলাদা করার পর ল্যান্ডারটিকে চাঁদের ১০০X৩০ কিলোমিটার কক্ষপথে নিয়ে আসা হবে। এরপর গতি কমানোর কাজ শুরু হবে। ২৩ অগস্টই হবে সেই অগ্নিপরীক্ষা যেদিন গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ করে ল্যান্ডার পালকের মতো (সফট ল্যান্ডিং) চাঁদের মাটিতে নামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন বিজ্ঞানীরা। ল্যান্ডার ঠিকমতো অবতরণ করতে পারলেই তার পেটের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসবে রোভার প্রজ্ঞান। দক্ষিণ মেরু (৭০ ডিগ্রি অক্ষাংশে) দিন অর্থাৎ সূর্যের আলো থাকতে থাকতেই কাজ শুরু দেবে চন্দ্রযানের রোভার ‘প্রজ্ঞান’।

নতুন চন্দ্রযানের ল্যান্ডার বিক্রমের পা অনেক বেশি মজবুত করা হয়েছে যাতে ল্যান্ডিংয়ের সময় যে ধাক্কা লাগবে তার অভিঘাত সহজেই সইতে পারে। ল্যান্ডিংয়ের বেগ প্রতি সেকেন্ডে দু’মিটার থেকে বাড়িয়ে তিন মিটার করা হয়েছে। অর্থাৎ বেশি বেগে অবতরণের সময়ও ল্যান্ডারের ‘পা’ ভাঙবে না। রোভারও অনেক উন্নত। এতে থাকছে আলফা পার্টিকল এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার (APXS) এবং লেজার ইনডিউসড ব্রেকডাউন স্পেকট্রোস্কোপ (LIBS)। এবার চাঁদে সফট ল্যান্ডিং করার জন্য যে জায়গা বেছে নেওয়া হয়েছে, সেটার পরিধি আগেরবারের থেকে বেশি রাখা হয়েছে। গতবার চাঁদে অবতরণের জন্য ল্যান্ডার ‘বিক্রম’-র কাছে মাত্র ৫০০ মিটারX৫০০ মিটার জায়গা ছিল। এবার সেটা বাড়িয়ে ৪ কিলোমিটারX২.৪ কিলোমিটার করা হয়েছে।

এবারের চন্দ্রযানে মোট ১৩টি ‘থ্রাস্টার’ রয়েছে, যা সফট ল্যান্ডিং করতে সাহায্য করবে। জ্বালানি সহ মহাকাশযানটির ওজন প্রায় আড়াই হাজার কেজি। জ্বালানিশূন্য অবস্থায় সেটির ওজন ৫০০ কিলোগ্রামে নেমে আসবে। তাতে থাকবে বিশেষ ক্যামেরা এবং অন্যান্য প্রযুক্তি। অবতরণস্থল থেকে যদি ল্যান্ডার সরেও যায় তাহলেও যাতে তার সঙ্গে যোগাযোগ বজায় থাকে সেই প্রযুক্তিও দেওয়া হয়েছে (chandrayaan-3)।