Home অন্যান্য কেস নম্বর হাজার চুয়াল্লিশ

কেস নম্বর হাজার চুয়াল্লিশ

ছোট গল্প

সৌরভ হোসেন

কাল বাদ পরশু রায়। তাও আবার কোনও নিম্ন কোর্টের রায় নয়, দেশের সর্বোচ্চ সুপ্রিম কোর্টের রায়! আবার সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ও নয়, ডিভিশন বেঞ্চের রায়! যে বেঞ্চের প্রতিনিধিত্ব করছেন স্বয়ং সুপ্রিম কোর্টের মহামান্য প্রধান বিচারপতি! কিছু একটা হয়ে গেলে আর কোথাও দরবার করার সুযোগ নেই। একেবারে বাতিলের দলে। আর এখানেই সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তাটা সুকেশের। সুপ্রিম কোর্টের হাজার চুয়াল্লিশ নম্বর কেসের বিবাদী পক্ষের দস্তাবেজে যার পোশাকি নাম সুকেশচন্দ্র দাঁ।

তার ঠাকুরদা অমিয়চন্দ্র দাঁ নাকি নাতির জন্মের অনেক আগে থেকেই নাতির নাম ‘সুকেশচন্দ্র দাঁ’ রাখব বলে ঠিক করে রেখেছিলেন। বাবা বিভূতিচন্দ্র দাঁ ছেলের সে নামের পরিবর্তে দ্বিতীয় কোনও নাম রাখার আর চেষ্টাই করেননি। এখন এ নামের সঙ্গে বাবা-ঠাকুরদাকে নিয়ে আর অত টানাটানি নেই, টানাটানি জগদীশপুর নেতাজি সুভাষ উচ্চবিদ্যালয়কে নিয়ে। কারণ, সুকেশ এই বিদ্যালয়ের নবম-দশম শ্রেণির অঙ্কের শিক্ষক। প্রতিদিন এত অঙ্ক কষে সুকেশ, ক্লাসের অঙ্ক, ঘরের অঙ্ক, হাটবাজারের অঙ্ক, এমনকি এ জগতের সবচেয়ে কঠিন ও জটিল অঙ্ক  মা আর বৌয়ের সম্পর্কের অঙ্কও নিখুঁতভাবে কষে এসেছে কিন্তু এই বাতিল-অবাতিলের অঙ্কটা নির্ভুল করে কষতে পারেনি! অথচ কোর্টের যা পর্যবেক্ষণ তাতে সে বাতিলের দলে পড়ে যেতে পারে।

এতদিন তার নামের সঙ্গে ‘দাঁ’ আছে, কিন্তু কোনও দিন সে ‘দাঁ’ ‘দা’ হয়ে ওঠেনি। কিন্তু আজ তার নিজেকে দা, কোদাল, হেঁসো, পাশনি হয়ে উঠতে মন চাইছে। প্রত্যেক সপ্তাহে একদিন নিয়ম করে সুকেশ কলকাতা গেছে চাকরি বাঁচানোর আন্দোলনে। রাস্তায় হেঁটেছে। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করেছে। কমিশনের অফিসের সামনে ধর্নায় বসেছে। এমনকি অনশনেও শামিল হয়েছে। এসব তো শারীরিক উপস্থিতির ব্যাপার। এর বাইরেও প্রত্যেক মাসে বেতনের অংশ দিয়েছে উকিলদেরকে। বেতনের সে দেওয়া অংশের অঙ্কও এক জায়গায় থির থাকেনি। ব্যাং লাফানোর মতো বেড়েছে। যেমন-তেমন উকিল লাগালে তো হবে না? ওজনদার উকিল লাগাতে হয়েছে। ফলে চাঁদার বহরও বেড়েছে। অণিমা বলেছে, এই ক’টা দিন নুন-ভাত খেয়ে কাটিয়ে দেব, সেরকম হলে একটা-দুটো পোশাকেই কাটিয়ে দেব পুরো বছর তবুও ভালো, তোমরা নামী উকিল লাগাও।

সুকেশ তখন বৌয়ের মুখের দিকে মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকেছে। সুকেশ জানে, এই চাকরিটাকে দেখেই অণিমার বাবা-মা তাদের মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন তার সঙ্গে। সেদিক দিয়ে ভাবতে গেলে চাকরিটাকেই বিয়ে করেছিল অণিমা, সুকেশকে নয়। সুকেশের সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় মেয়েটির দিকে তাকিয়ে। চাকরিটা চলে গেলে কী করে ওকে মানুষ করব? সুকেশের শখ মেয়েকে বড় ডাক্তার বানাবে। সেজন্য প্রথম থেকেই শহরের নামী ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করেছে। তার মতো তার মেয়ে যেন ওই হ্যাংলা-ফ্যাংলা প্রাইমারি স্কুলে না পড়ে। ওখানে পড়ে কেউ মানুষ হবে না। ‘তাহলে তুই কী করে মানুষ হলি? ওই হ্যাংলা-ফ্যাংলা পিরাইমারি স্কুলে পড়েই তো হাইস্কুল টিচার হলি?’ বিভূতিচন্দ্র ছেলেকে কথাটা বলেছিলেন। সুকেশ চুপ থাকেনি। বাবার মুখের ওপর বলে দিয়েছিল, ‘এখন কি গ্রামে সেই আগের পরিবেশ আর আছে, বাবা? প্রাইমারি স্কুলগুলোতে আগের মতো পড়াশোনা হয় না। আগের মতো দায়িত্ববান শিক্ষক-শিক্ষিকাও নেই।’

বিভূতিবাবু আর ছেলের সঙ্গে তর্কে যাননি। যুগ পালটেছে। এখনকার ছেলেরা কি আর বাবা-মার সিদ্ধান্ত নেবে? নেবে না। বেতনের একটা বড় অংশ মেয়ের পড়াশোনার খরচে চলে যায় সুকেশের। বিভূতি সুকেশের মা আরতিবালাকে দিয়ে একবার সুকেশকে বলিয়েছিলেন, আর একটা ছেলেমেয়ে নিতে। একটা সন্তান বড় ন্যাওটা হয়। সুকেশ বাবা-মার সে কথাকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছে। বলেছে, একটাকেই প্রকৃত মানুষের মতো মানুষ করব। তোমাদের মতো ওসব বারোখিটকেলে যাব না। গুচ্ছের ছেলেমেয়ে নিয়ে নাকের দড়ি গলায়, গলার দড়ি নাকে করব না। আমাদের একটা তোমাদের দশটা। সুকেশ দশটার কথা বললেও, আদতে তারা দশ ভাই-বোন নয়। বিভূতি আর আরতির তিন ছেলেমেয়ে। এক ছেলে আর দুই মেয়ে। সুকেশ বয়সে ছোট।

চাকরির সূত্রে বহরমপুর শহরের বাসিন্দা হলেও সুকেশদের বাড়ি বাঁকুড়ার শালতোড়ায়। তার চাকরির বয়স আর বহরমপুর শহরের বাসিন্দা হওয়ার বয়স একই। সাত বছর। চাকরির প্রথম বছরেই বিয়ে। আর বিয়ের পরের বছরেই ঋতুর জন্ম। সবকিছু এত দ্রুত হয়ে গেছিল বুঝেই উঠতে পারেনি সুকেশ। অণিমা দ্রুত মা হওয়ায় বিভূতি আর আরতিবালা অবশ্য খুশিই হয়েছিলেন। তাঁদের মন থেকে একটা দুশ্চিন্তা দূর হয়েছিল। আজকালকার মেয়েরা নাকি দ্রুত মা হতেই চাইছে না! পরে মা হতে গিয়ে নানান সমস্যায় পড়ছে। তখন রোজগারের অর্ধেক টাকা চলে যাচ্ছে চিকিৎসায়। সে হ্যাপা থেকে বেঁচেছে ছেলে সুকেশ। কিন্তু কোর্টের হ্যাপা? কোর্টের হ্যাপা থেকে কী করে বাঁচবে সুকেশ? বাঁচার যে সম্ভাবনা খুবই কম। বলা যায়, একটা সরু সুতোয় আটকে আছে ভাগ্য। হাইকোর্ট পুরো প্যানেল বাতিল করে দিয়েছে। বলা যেতে পারে, হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের দাবিকেই মেনে নিয়েছে। হাইকোর্টের সে সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে গেছে। সুকেশরা এই কেসে রাজ্য সরকারের সঙ্গে ট্যাগ হয়েছে। তারাও আলাদা আইনজীবী নিযুক্ত করেছে।

সুকেশরা সংখ্যায় তো আর কম নয়? আঠারো হাজারেরও বেশি! ভুক্তভোগী তো আর ওই আঠারো হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা নন, আঠারো হাজার পরিবার! একজনের চাকরি চলে যাওয়া মানে পুরো একটা পরিবার ভেসে যাওয়া! সুকেশ সবসময় মনমরা হয়ে থাকছে। যেন ধড়টা আছে, কিন্তু সে ধড়ে প্রাণ নেই। ক্লাসে গিয়ে মন বসাতে পারছে না। মনে হচ্ছে, বেগার খাটা হচ্ছে না তো! স্টাফরুমেও কলিগদের সঙ্গে আগের মতো অত খিখি খ্যাখ্যা করে গল্পগুজবে মেতে উঠতে পারছে না। অথচ প্রথম প্রথম এ কথা সে কথায় স্টাফরুমকে মাতিয়ে রাখত। এখন অফপিরিয়ডে একটুখানি বসছে তারপর বেরিয়ে যাচ্ছে বাইরে। বাইরের দিঘল বারান্দায় হয় কখনও পায়চারি করছে আর না হলে কোনও একটা ব্যালকনির কাছে গিয়ে মনমরা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকছে। যেন জগতের সব চিন্তা তার মাথায়। কখনো-কখনো নীচের ফুলে-গাছে ঘেরা প্রেয়ার গ্রাউন্ডের কোনও এক জায়গায় চুপ করে বসে থাকছে।

মাথায় তখন একটাই চিন্তা, চাকরিটা চলে গেলে কী করে খাবে? বাবার সেরকম জমিজমা নেই যে চাষবাস করে খাবে। বড় কোনও ব্যবসাও নেই, যে সেখানে গিয়ে বসবে। বাবা-মাও এখন তার ইনকামের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। বাবা সুগারের পেশেন্ট। মা’র হাঁপানির সমস্যা। দুজনকেই দিনে-রাতে দু’বেলা তিনবেলা ওষুধ খেতে হয়। শুধু ওষুধ খাওয়াই নয়, মাসে একবার-দু’বার নিয়ম করে বাবার সুগার টেস্ট করাতে হয়। সেসব করতে গিয়ে গুচ্ছের পয়সা খসে। আবার প্রত্যেক মাসে বেতন থেকে হোমলোনের ইএমআই কাটে। এত কিছুর হ্যাপা এই একখানা চাকরির ওপর দিয়ে যায়। এ অবস্থায় চাকরিটা চলে গেলে তো পরিবার নিয়ে একেবারে নরকে গিয়ে পড়তে হবে! আগে আপদ-বিপদে সিএল নিয়েছে সুকেশ। কিন্তু শেষ কয়েকটা সিএল নিয়েছে কোর্টের লাইভ-শুনানি দেখার জন্য। নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ রেখে বুঁদ হয়ে শুনেছে সে শুনানি। এভাবে স্ক্রিনে চোখ রেখে লাইভ কোনও কিছু শেষ দেখেছে সেই কলেজ পিরিয়ডে। তখন নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে বুঁদ হয়ে টিভিতে ক্রিকেট ম্যাচ দেখত রাহুল দ্রাবিড়ের ভক্ত সুকেশ। ইনকামের দুশ্চিন্তার সঙ্গে এখন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানসম্মানের দুশ্চিন্তা। চাকরিটা চলে গেলে, লোকে ঠেস মেরে বলবে, টাকায় কেনা চাকরিটা চলে গেল নাকি রে, সুকেশ। তার বাবাকেও শুনতে হবে বাঁকা কথা, ছেলের চাকরির জন্য কত টাকা দিয়েছিলেন, বিভূতিবাবু? সে কথা বাবা আর নিতে পারবেন না। অপমান সহ্য করতে না পেরে হয়তো স্ট্রোক হয়ে গেল!

অথচ সুকেশ জানে, চাকরিটা পেতে তার মাত্র দুশো টাকা খরচ হয়েছিল। ফর্ম ফিলআপের ফিজ ছিল দুশো টাকা। এর বাইরে আর কোত্থাও এক পয়সাও দিতে হয়নি। কোনওভাবে হুমড়ি খেয়ে পড়লেই যারা খ্যাখ্যা করে হাসার জন্য প্রস্তুত আছে তারা এমনিতেই বলতে শুরু করে দিয়েছে, কোন লিস্টে আছিস রে সুকেশ, ভেজাল না অ-ভেজাল লিস্টে? কেউ বলছে, ‘চাকরির টাকা আর কতদিন রে, সুকেশ?’ কেউ কেউ তো আরও দু’ধাপ এগিয়ে গিয়ে ফুট কাটছে, ‘চাকরিটা চলে গেলে এতদিনের বেতনের টাকা সরকারকে ফেরত দিতে পারবি, সুকেশ?’ সেসব ব্যঙ্গবিদ্রুপ আর কটু কথা সাড়ে উনষাট কেজি ওজনের পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চির শরীরটা নিতে পারে না। হাইকোর্টে পুরো প্যানেল বাতিল হওয়ার আগে সুকেশের ওজন ছিল পঁয়ষট্টি কেজি। এই ক’মাসে সাড়ে পাঁচ কেজি ওজন কমে গেছে।

ভূগোলের শিক্ষক অতনু বাইন বললেন, “এত দুশ্চিন্তা করো না। দেখো, কারও চাকরি যাবে না। এতগুলো মানুষের চাকরি কি কোনওদিন গেছে?” তারপরেই সুকেশের টিউশন পড়ানোর প্রসঙ্গটা টেনে বললেন, “তুমি তো আগে টিউশন পড়াতে। শুনেছি, অনেকগুলো ব্যাচ ছিল। সে কাজেই না হয় আবার ঢুকে যাবে।’’ অতনু বাইন এই বিদ্যালয়ের পুরোনো শিক্ষক। আসছে জুনে কুড়ি বছর পূর্ণ হবে। টিউশন বললেই টিউশন? টিউশন তো আর একদিনে গড়ে ওঠে না। তিলতিল করে গড়ে তুলতে হয়। স্কুল শিক্ষকের চাকরিটা পাওয়ার আগে সেভাবেই টিউশনটা গড়ে তুলেছিল সুকেশ। সকাল-সন্ধ্যা মিলে চার চারটে ব্যাচ ছিল। এক এক ব্যাচে পঞ্চাশজন করে ছাত্রছাত্রী। এর বাইরেও রাতে মোটা টাকার বিনিময়ে কয়েকটা বাড়িতেও পড়াতে যেত। মাস গেলে একটা মোটা টাকা আসত। বলতে গেলে, এখন চাকরি করে যা টাকা পান তার চেয়ে কিছুটা বেশিই। কিন্তু সেই টিউশন তো আর হুট করে ধরা যাবে না। আর এখানেই দুশ্চিন্তাটা তাকে কুরে-কুরে খাচ্ছে। রাত পোহালেই সুপ্রিম কোর্টের রায়।

দুই

আজ আর ছুটি নিল না সুকেশ। মনে মনে ঠিক করল, যা হওয়ার হবে, স্কুলে বসেই হবে। চাকরিটা চলে গেলে শেষবারের মতো স্কুলটাকে দেখে চলে আসব। এই অল্প কয়েকটা বছরে স্কুলটার ওপর তারা মায়া পড়ে গেছে। দু’দিন-তিনদিন না এলে স্কুলটার জন্য মন খারাপ করে। সুকেশ মাঝেমধ্যে ফুল গাছগুলোর গোড়ায় জল দেয়। শুকনো-পাকা পাতা ঝরিয়ে দেয়। অবাঞ্ছিত ডালপালা কেটে দেয়। টবগুলোয় আগাছা জন্মালে তা পরিষ্কার করে দেয়। গ্রীষ্মের আর পুজোর ছুটিতে যখন স্কুল টানা বন্ধ থাকে তখন স্কুলের পিওন হাসিব শেখকে ফোন করে গাছগুলোর খবর নেয়। জল দিতে বলে। এসবের পর যখন গাছগুলোয় ফুল ফোটে তখন সুকেশ দেখে, ফুলগুলো ড্যাবড্যাব করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তখন কী যে আনন্দ হয় তার তা বলে বোঝানো যাবে না।

বেলা এগারোটা বাজতেই শুনানি শুরু হল। অদ্ভুতভাবে সুকেশ আজ লাইভ শুনানি দেখল না! অন্য কলিগরা জটলা হয়ে মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ ফুঁড়ে শুনানি দেখছেন। সুকেশ তখন নীচে প্রেয়ার গ্রাউন্ডের পুবদিকে শিউলি গাছটার নীচে দাঁড়িয়ে আছে। শিউলি গাছটা তার হাতেই লাগানো। চাকরি পাওয়ার তৃতীয় দিনে সে কিছুটা বড় হয়ে যাওয়া শিউলি গাছ নার্সারি থেকে কিনে এনে এই প্রেয়ার গ্রাউন্ডের পুবকোণে লাগিয়ে ছিল। ভেবেছিল, হয়তো গাছটা বাঁচবে না। কিন্তু গাছটা মরেনি। গাছটা তো বেঁচে গেছেই, এবছর ফুলও ফুটেছে।

সে শিউলি ফুলের সুঘ্রাণ লাগছে সুকেশের নাকে। কিন্তু এক দুশ্চিন্তা সেসব সুঘ্রাণকে বাসি করে দিচ্ছে। সুকেশ গাছটার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছে, আমি স্কুলে না থাকি আমার হাতে পোঁতা শিউলি গাছটা তো থেকে যাবে? চোখ ছলছল করে উঠল সুকেশের। গাছের ফাঁকফোকর দিয়ে ঠিকরে পড়ছে পৌষের মিষ্টি রোদ। সে রোদ পোহাচ্ছে মুক্তমঞ্চটা। সুকেশ মঞ্চটার কাছে গেল। সুকেশের কানে এসে বিঁধছে, এই মঞ্চে মঞ্চস্থ করা তার লেখা নাটকের ডায়ালগ! যেন সেসব চরিত্রগুলো বলছে, আমাদের ছেড়ে আপনি কোথাও যেতে পারবেন না স্যর। গাছগুলোও যেন বলছে, আপনি চলে গলে আমরা যে সব মরে যাব, স্যর।

হঠাৎ দোতলার বারান্দা থেকে ইতিহাসের শিক্ষক হাসানুজ্জামানের চিৎকার ভেসে এল, “সুকেশ, শুনানি শেষ হয়ে গেল।’’ হাসানুজ্জামানের ডাকে ঘোর ভাঙল সুকেশের। সুকেশ মনমরা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, “পুরো প্যানেল বাতিল হয়ে গেল!” হাসানুজ্জামান থরথর করে বললেন, “না, আজ রায়দান হল না। ডেট পিছিয়ে গেল। রায়দানের ডেট পরের মাসের সাত তারিখ।’’

-সংগৃহীত