Home বিনোদন রূপনগরের নিঃসঙ্গ রাজকুমার ও পূর্ণিমার রাত

রূপনগরের নিঃসঙ্গ রাজকুমার ও পূর্ণিমার রাত


(এক জাদুময় লোককথার বিস্তৃত রূপ)

অনেক, অনেক বছর আগে, এমন এক রাজ্য ছিল যার নাম ছিল রূপনগর। সে রাজ্যে ছিল এক রাজা, নাম তার রাজেন্দ্র। তিনি ছিলেন দয়ালু, প্রজাপ্রেমী ও জ্ঞানবান শাসক। তবে তার একমাত্র পুত্র, রাজকুমার অরণ্য, ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।

ছোটবেলা থেকেই অরণ্য ছিল কিছুটা অদ্ভুত। সে ঘন্টার পর ঘন্টা রাজপ্রাসাদের বাগানে বসে থাকত, একা একা কথা বলত ফুলের সঙ্গে, গাছের ছায়ার নিচে গান গাইত, আর মাঝে মাঝে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত আকাশের চাঁদের দিকে। রাজসভায় তাকে নিয়ে ফিসফাস চলত “ও তো পাগল, ওর মাথা ঠিক নেই!”

তবে তার মা, রানি সুধা জানতেন ছেলের মধ্যে লুকিয়ে আছে এক গভীর রহস্য। অরণ্য যখন মাত্র দশ বছরের, এক রাতে হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে ছুটে গেল প্রাসাদের পেছনের বাগানে। সেখানে দাঁড়িয়ে সে বলল, “চাঁদ আজ আমাকে ডেকেছে, মা। ও বলেছে, আমি ওর আলো দিয়ে একদিন অন্ধকার ভেঙে দেব।”

রাজা এসব কথা শুনে ক্ষেপে যান। তিনি অরণ্যকে শাস্তি দেন, রাজসভা থেকে দূরে রাখেন। কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না ছেলের। সে দিনে দিনে আরও গভীর হয়ে পড়ে নিজের জগতের মধ্যে।

এক পূর্ণিমার রাতে, যখন রূপনগর ছিল নিস্তব্ধ, হঠাৎ আকাশ জুড়ে এক অদ্ভুত জ্যোতি ছড়িয়ে পড়ে। চারদিকে অদ্ভুত আলো, যেন দিনের মধ্যে রাত নেমে এসেছে। সবাই ঘুম থেকে উঠে দেখে রাজকুমার অরণ্য নেই!

সেই রাতেই এক বৃদ্ধ জ্যোতিষী রাজদরবারে এসে জানায়—“আপনার পুত্র আসলে পাগল নন, তিনি চন্দ্রলোকের আশীর্বাদপুষ্ট এক ‘আলোক-শিশু’। চাঁদের আলোর মধ্যে দিয়ে তিনি প্রবেশ করেছেন এক গোপন জগতে, যেখানে সময় চলে ভিন্নভাবে। একদিন তিনি ফিরে আসবেন, তবে তিনি তখন আর শুধু রাজকুমার হবেন না হবেন এক বোধিসত্ত্ব, এক জ্যোতির্ময় পথপ্রদর্শক।”

সেই থেকে রাজ্যজুড়ে একটাই কাহিনি ঘোরে “পাগলা রাজকুমার একদিন ফিরবে।” পূর্ণিমা রাতে এখনো অনেকে দেখে, বাগানের ছায়ায় এক ছায়ামূর্তি বসে থাকে, চাঁদের দিকে তাকিয়ে হাসে।

বছর কেটে যায়, রাজা মারা যান, রাজ্য অন্য কারো হাতে চলে যায়। কিন্তু রূপনগরের শিশুদের ঘুমপাড়ানি গল্পে আজও শোনা যায় সেই নাম—“অরণ্য, পাগলা নয়, সে ছিল চাঁদের আলোয় লেখা এক আশ্চর্য রূপকথা।”