চীনের ছেংতু শহরের এক জমজমাট প্রদর্শনীতে বসে ফরাসি চা-প্রেমিক গ্রেগরি ক্যাটিন এক কাপ উলং চায়ে চুমুক দিচ্ছিলেন আর বলছিলেন, ‘চা তো নয়, এ যেন পুরোই বিপ্লব!’
তিন দশক ধরে দুনিয়াজুড়ে পানীয় ব্যবসার মানুষ গ্রেগরি। এবার চীনের নতুন ঢঙের চা-সংস্কৃতির প্রেমে পড়ে গেছেন তিনি।গ্রেগরি ছুটে এসেছেন হংকং থেকে ছেংতুতে। সেখানে চলছে চীনের খাদ্য ও পানীয় মেলা। ভালো মানের ব্র্যান্ড খুঁজে পেলে সেগুলো ইউরোপে নেবেন—এই ছিল গ্রেগরির মিশন।
এদিকে চীনের চায়ের এখন নতুন রূপ। শুধু ‘চা’নয়, এই চায়ে মিশেছে সৃজনশীলতা, কসমোপলিটন স্বাদ আর কিছুটা নাটকীয়তা! সাউথইস্ট এশিয়ায় চলেছে ব্ল্যাক সুগার বাবল টি, আর ইউরোপে হিট জিরো সুগার ফলের ইনফিউশন চা। অন্যদিকে, বার্সেলোনায় হাতে হাতে বিকোচ্ছে ম্যাচা পার্ল মিল্ক টি।
একসময় ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলেও চীনা চা এখন উদ্ভাবনের এক অনন্য রূপ। হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্যের সাথে বিশ্বজনীন ভাবের মিশ্রণ ঘটাচ্ছে এই চা। চা-বিপ্লবে নেতৃত্বে আছে হেইটি, চাপান্ডা’র মতো ব্র্যান্ডগুলো। চাপান্ডা’র ‘ম্যাংগো পমেলো সাগো’ এরই মধ্যে ১ লাখ ৪০ হাজার কাপ বিক্রি হয়েছে বিদেশে। অন্যদিকে, গ্রাস জেলি অ্যান্ড টি-এর উত্তর আমেরিকার দোকানগুলোয় দিনে বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৭ হাজার ডলারের চা।
আরও মজার বিষয় হলো, প্রতিটি শহরের মানুষের রুচির কথা ভেবেই চা তৈরি করা হচ্ছে—কুয়ালালামপুরে দুধ বেশি, বার্সেলোনায় মাচা বেশি। চা পান্ডার গ্লোবাল নেতা ওয়াং হুয়ান বলেন, ‘স্বাদ বদলাচ্ছি ঠিকই, কিন্তু চীনা আত্মা ঠিক রেখে।’
দোকানের ভেতরেও নতুন ধারা— হেইটি-এর নিউইয়র্কের দোকানে চা খেতে খেতে মেডিটেশন করা যায়! কোনো কোনো কাপ আবার পিকিং অপেরার ডিজাইনে মোড়া, যেন চায়ের সঙ্গে মিলছে ইতিহাসের ঘ্রাণও। গ্রেগরি বললেন, ‘চীন শুধু চা বানায়নি, চায়ের গোটা চিন্তাধারাই বদলে দিয়েছে।’
বিশ্বজুড়ে এই ‘নিউ-স্টাইল’ চায়ের বাজার এখন ৩৫ হাজার কোটি ইউয়ান ছাড়িয়েছে। প্যারিস থেকে ব্যাংকক, চায়ের পাতায় পাতায় এখন চীনের সুবাস!