অতীতের ছায়া, আগুনের সামনে দাঁড়ানো সত্য
স্মৃতি হাসান
ফয়’স লেকের ভেজা শীতল হাওয়া তখনও থামেনি। রাতের কুয়াশা ঘন হয়ে আছে তীব্র উদ্বেগের মতো। অনুপম আর সেই রহস্যময় তরুণীর ভেজা পোশাক থেকে পানি ঝরছে, কিন্তু তাদের চারপাশে ছায়া-সন্ত্রস্ত পরিবেশ আরও গাঢ় হচ্ছে। তারা লেকের পাড়ের একটি পুরনো কাঠের ঘাটে উঠে আসতেই দূর থেকে ফিসফিস শব্দ আবার শোনা গেল। যেন কেউ তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ নজর করছে।
ঘাটের ওপরে, পাতাঝরা অন্ধকার বাগানের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা পুরনো ল্যাম্পপোস্টে ঝুলছে মরিচা ধরা একটি লকেট। একই নকশা, একই রুপালি আভা। মেয়েটি হাত কাঁপতে কাঁপতে লকেটের দিকে তাকিয়ে বলল, “এটা… আমার মায়ের।” কথাটা বলার সাথে সাথে তার চোখে জমা হল ধোঁয়াটে স্মৃতি আর অদৃশ্য শোক।
অনুপম আর এক মুহূর্ত দেরি করল না। লকেটটি হাতে নিতেই ঢোক গেলার মতো শব্দ হলো। ভেতরে পুরনো ছবির সাথে আরেকটি অদ্ভুত চিহ্ন। এই চিহ্নটাই ছায়ামানুষগুলো খুঁজছে—এটা এখন অনুপমেরও নিশ্চিত ধারণা।
এই সময় হঠাৎ ঝোপের আড়ালে উজ্জ্বল আলো। দুজন চমকে পিছিয়ে এল। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছায়ামানুষদের চোখে তখন লেকের পানির মতো ঠাণ্ডা নিষ্ঠুরতা। তাদের লক্ষ্য এখন শুধু মেয়েটি নয়, অনুপমও। কারণ তাদের হাতে রয়েছে ‘অতীতের সত্যের’ চাবি।
ওরা এগিয়ে আসছে। অনুপম মেয়েটিকে হাত ধরে টেনে নিল। ভাঙা সিঁড়ি বেয়ে দুজন ছুটে গেল সেই পুরনো প্রশাসনিক ভবনের দিকে যা বহু বছর ধরে বন্ধ। ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করতেই বাইরে ধাক্কা। চিৎকার। ধাতব শব্দ। প্রতিটি শব্দ যেন ভয়টাকে ধারালো করে তুলছে।
ভবনের অন্ধকার ঘরে মেয়েটির কণ্ঠ ভেঙে আসল।
“আমার মা ওদের হাত থেকে পালানোর সময় এই লেকেই হারিয়ে যায়। আজ বুঝতে পারছি—ওরা কেন আমাকে এতদিন ধরে খুঁজছিল।”
অনুপম এই প্রথম বুঝল, গল্পটি কেবল হারিয়ে যাওয়া মেয়ের নয়, একটি বড় অপরাধচক্রের গোপন ইতিহাসের। এই লকেটই ছিল সেই ‘প্রমাণ’ যা চাপা পড়ে যাওয়ার কথা ছিল চিরতরে। আর এই রাতের অন্ধকারেই সেই সত্য আবার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
দুজনের দম বন্ধ হয়ে আসা এই মুহূর্তে হঠাৎ আরেকটি দরজা খুলে গেল।
কে যেন নরম গলায় বলল,
“দ্রুত আসো। সময় কম।”
কে সে? বন্ধু না শত্রু?
এ রহস্যের জবাব দেবে পরবর্তী পর্ব।
পরবর্তী পর্বের জন্য আগামীকাল ভিজিট করুন: businesstoday24.com










