বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কক্সবাজার: টেকনাফে পাহাড় সংলগ্ন এলাকা থেকে প্রকাশ্যে ৬ কিশোরকে অস্ত্র ঠেকিয়ে অপহরণের ঘটনা স্থানীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
রবিবার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বাহারছড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ শীলখালী এলাকায় একটি চায়ের দোকান থেকে সশস্ত্র ডাকাতদল এই অপহরণ করে। অপহরণের পরপরই দু’জন কিশোর কৌশল অবলম্বন করে পালিয়ে আসতে সক্ষম হলেও, অবশিষ্ট চার কিশোরকে উদ্ধারে পুলিশ ও স্থানীয়দের রাতভর অভিযান সত্ত্বেও সোমবার সকাল পর্যন্ত কোনো সফলতা আসেনি।
প্রকাশ্যে অপহরণ ও স্থানীয় আতংক
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাহারছড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ শীলখালী বিজিবি চেকপোস্টের পূর্ব পাশে অবস্থিত আলমের চায়ের দোকানে বসা ছিল ওই ছয় কিশোর। এই সময় একদল সশস্ত্র লোক অস্ত্র দেখিয়ে তাদের জোরপূর্বক পাহাড়ি এলাকায় তুলে নিয়ে যায়। অপহৃতরা হলো—মো. মামুন, আনোয়ার হোসেন, গিয়াস উদ্দিন, আবু বক্কর ছিদ্দিক, মো. শাহিন এবং মো. ইসমাইল। এদের মধ্যে মো. শাহিন ও মো. ইসমাইল সুযোগ বুঝে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন এবং পরিবারকে ঘটনাটি অবহিত করেন।
দক্ষিণ শীলখালীর মতো একটি জনবহুল এলাকায়, যেখানে কাছাকাছি বিজিবি চেকপোস্ট রয়েছে, সেখান থেকে অস্ত্র দেখিয়ে প্রকাশ্যে ৬ জনকে অপহরণের ঘটনাটি স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি ও নিরাপত্তার দুর্বলতাকেই তীব্রভাবে তুলে ধরছে। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, টেকনাফের এই প্রান্তিক পাহাড়ি এলাকাগুলোতে সশস্ত্র দুর্বৃত্তদের অবাধ বিচরণ এখনো বিদ্যমান।
নিরাপত্তা বিশ্লেষণে দুর্বলতা
টেকনাফের পাহাড়ি অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই মুক্তিপণের জন্য অপহরণ বা মাদক সংশ্লিষ্ট সশস্ত্র গোষ্ঠীর অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত। এই ধরনের ঘটনা প্রায়শই সীমান্ত সংলগ্ন ইউনিয়নগুলোতে, বিশেষ করে বাহারছড়ার মতো এলাকায়, মানুষের জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিককালে এই অঞ্চলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা সত্ত্বেও, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো মূলত পাহাড়ের গভীরে আত্মগোপন করে থাকে এবং দুর্বল নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে সুযোগ নেয়। এই অপহরণের ঘটনাটি নির্দেশ করে যে, স্থানীয় চা দোকান বা জনসমাগমস্থল পর্যন্ত সশস্ত্র ডাকাতদলের অনুপ্রবেশের সাহস তৈরি হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর প্রশ্ন তুলেছে। স্থানীয়দের জন্য প্রতিটি রাত “বিভীষিকাময়” হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন এলাকার রাজনৈতিক নেতারা।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও অভিযানের দাবি
ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে কক্সবাজার জেলা জামায়াতের আমীর ও উখিয়া-টেকনাফ আসনের এমপি প্রার্থী অধ্যক্ষ নুর আহমেদ আনোয়ারী অবিলম্বে অপহৃতদের উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “টেকনাফ বাহারছড়ায় আবারো প্রকাশ্যে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এলাকাবাসীর জন্য প্রতিটি রাত যেন বিভীষিকাময়। মায়ের আকুতি প্রতিটি মনকে নাড়া দিচ্ছে। সেনাবাহিনী সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত অভিযান করতে হবে।” তার এই বক্তব্যে স্থানীয় মানুষের চরম হতাশা এবং সেনাবাহিনীর মতো বিশেষ বাহিনীর মাধ্যমে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে।
এদিকে, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক দুর্জয় বিশ্বাস অপহরণের ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায় এবং স্থানীয় লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে সন্ধ্যার পর থেকেই গভীর পাহাড়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তিনি অপহৃতদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন।
৪ জন কিশোরের নিখোঁজ থাকার ঘটনা পরিবার ও পুরো এলাকায় চরম উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করেছে। টেকনাফের এই অপহরণকাণ্ড শুধু একটি অপরাধ নয়, এটি স্থানীয় প্রশাসনের জন্য একটি বড় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ। পাহাড়ি এলাকার দুর্বৃত্তদের নির্মূলে এবং জনজীবনে নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের অভিযান আরও জোরদার এবং টেকসই করার বিকল্প নেই। এই ঘটনার দ্রুত ও সফল সমাধান না হলে সাধারণ মানুষের মনে আইন-শৃঙ্খলার প্রতি আস্থা আরও কমতে পারে।










