হেলথ ডেস্ক: চোখের পাপড়ির গোড়ায় হঠাৎ করে লালচে, ফুলে ওঠা একটি ছোট ফোড়ার মতো গঠন—এই সমস্যাটিকে বাংলায় বলা হয় আঁজনাই। চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলা হয় হোর্ডিওলাম (Hordeolum), এবং সাধারণ মানুষের ভাষায় এটি চোখে ফোঁড়া বা স্টাই নামে পরিচিত। যদিও এটি প্রাণঘাতী কোনো সমস্যা নয়, তবু চেহারায় বিরূপ প্রভাব ফেলার পাশাপাশি দৃষ্টিশক্তিতে সাময়িক অস্বস্তি সৃষ্টি করে।
আঁজনাই কীভাবে হয়?
চোখের পাপড়ির গোড়ায় ছোট ছোট গ্রন্থি থাকে, যেখান থেকে তৈলাক্ত পদার্থ নির্গত হয়। এসব গ্রন্থি কখনো ময়লা, ধূলা বা ত্বকের মৃত কোষ দিয়ে আটকে গেলে সেখানেই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয় এবং ফোঁড়ার মতো ফুলে ওঠে। সাধারণত স্ট্যাফাইলোকক্কাস (Staphylococcus) ব্যাকটেরিয়া এই সংক্রমণের জন্য দায়ী।
লক্ষণ
চোখে আঁজনাই হলে নিচের কিছু লক্ষণ দেখা যায়—
- চোখের পাতার কোণায় বা গোড়ায় ছোট লালচে ফোলাভাব
- হালকা ব্যথা ও জ্বালা
- চোখে ভারী লাগা বা অস্বস্তি
- ফোলা জায়গায় পুঁজ জমা হতে পারে
- মাঝে মাঝে জ্বর বা লিম্ফনোড ফুলে ওঠা
ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিরা
যাদের ত্বক তৈলাক্ত, চোখ ঘন ঘন হাত দিয়ে ঘষেন বা পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখেন না, তাদের মধ্যে আঁজনাই হওয়ার প্রবণতা বেশি। তাছাড়া যারা অতিরিক্ত চোখের মেকআপ ব্যবহার করেন এবং নিয়মিত পরিষ্কার করেন না, তারাও ঝুঁকিতে থাকেন।
প্রতিকারের ঘরোয়া উপায়
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অবশ্যই নিরাপদ, তবে অনেক সময় ঘরোয়া যত্নেই আঁজনাই সেরে যায়। যেমন—
- গরম পানির সেঁক: পরিষ্কার কাপড় গরম পানিতে ভিজিয়ে ৫-১০ মিনিট করে দিনে কয়েকবার সেঁক দিলে ফোলা স্থান নরম হয়ে পুঁজ বেরিয়ে যেতে পারে।
- চোখে হাত না দেওয়া: চোখ ঘষা বা আঁজনাই স্পর্শ করলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
- পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা: চোখের চারপাশ পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- মেকআপ পরিহার: সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত চোখে কোনো প্রসাধনী ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে?
- আঁজনাই ৭ দিনের বেশি স্থায়ী হলে
- ব্যথা বা ফোলা বাড়তে থাকলে
- চোখ লাল হয়ে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হলে
- বারবার আঁজনাই হলে
চিকিৎসা পদ্ধতি
চিকিৎসক প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক আই ড্রপ বা মলম দিতে পারেন। দীর্ঘস্থায়ী বা পুঁজ জমে থাকলে ছেদ করে পুঁজ বের করে দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
চোখে আঁজনাই সাধারণত স্বল্পমেয়াদি ও আত্মনিয়ন্ত্রণযোগ্য সমস্যা। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং চোখের পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করলেই সহজেই প্রতিরোধ করা যায় এই অস্বস্তিকর সংক্রমণ। বারবার আঁজনাই হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ এটি অন্য কোনো চোখের সমস্যারও ইঙ্গিত হতে পারে।