লন্ডনের চিঠি
আজহার মুনিম, লন্ডন: যুক্তরাজ্যে বৈধভাবে অবস্থানরত অভিবাসীদের স্থায়ী বসবাসের যোগ্যতা বা ইনডেফিনিট লিভ টু রিমেইন সংক্ষেপে আইএলআর নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির হোম অফিস। লন্ডনভিত্তিক অভিবাসন সংগঠনগুলো বলছে, নতুন নিয়মগুলো অনেকের জন্য সুযোগ তৈরি করলেও কিছু শর্ত কঠোর হওয়ায় বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগও বাড়ছে।
হোম অফিস জানিয়েছে, আইএলআর পাওয়ার সাধারণ নিয়ম এখনো পাঁচ বছরের বৈধ বসবাস, তবে দক্ষ অভিবাসীদের ক্ষেত্রে আয়সীমা ও কাজের স্থায়ীত্বের ক্ষেত্রে নতুন মানদণ্ড যোগ করা হয়েছে। বিশেষ করে স্কিলড ওয়ার্কার ভিসাধারীদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম আয়সীমা বার্ষিক ৩৮৬০০ পাউন্ড নির্ধারণ করা হচ্ছে, যা আগে ছিল উল্লেখযোগ্যভাবে কম। স্বাস্থ্যসেবা খাতে কর্মরতদের জন্য কিছু ছাড় থাকলেও বেশকিছু পেশায় আয়সীমা বাড়ায় অনেকেই আইএলআর আবেদনে নতুন হিসাব করতে বাধ্য হচ্ছেন।
নতুন নীতিতে ইংরেজি দক্ষতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে আরও কঠোরতা যোগ হয়েছে বলে লন্ডনের কয়েকটি ইমিগ্রেশন কনসালটেন্সি জানিয়েছে। আগে যেখানে নির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষার ফল গ্রহণযোগ্য ছিল, এখন পরীক্ষার তালিকা সংকুচিত করে কেবল যুক্তরাজ্য অনুমোদিত পরীক্ষাগুলোই রাখা হচ্ছে। ফলে দেশ থেকে পরিবার নিয়ে আসতে ইচ্ছুকদেরও অতিরিক্ত প্রস্তুতি নিতে হবে।
তবে ইতিবাচক পরিবর্তন হিসেবে পরিবার পুনর্মিলন নীতি সহজ করার ঘোষণা দিয়েছে হোম অফিস। বৈধভাবে দীর্ঘদিন যুক্তরাজ্যে থাকা অভিবাসীদের সন্তানদের নাগরিকত্ব আবেদন প্রক্রিয়া আরও দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এটি বহু বছর ধরে থাকা এক ধরনের অনিশ্চয়তা কমাবে।
উল্লেখযোগ্য আরেকটি পরিবর্তন হলো ভিসার মেয়াদে বিরতি বা গ্যাপকে আর অতটা কঠোরভাবে গণ্য করা হচ্ছে না। মহামারির সময় কিংবা নিয়োগকর্তার কারণে সৃষ্ট কর্মবিরতি থাকলে তা আইএলআর আবেদনকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে না। হোম অফিসের এই অবস্থানকে অনেক আইনজীবী ইতিবাচক উন্নতি বলে মন্তব্য করেছেন।
তবে অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে নাগরিকত্বের জন্য প্রয়োজনীয় বসবাসকাল। বর্তমান নীতিতে আইএলআর পাওয়ার এক বছর পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা গেলেও ভবিষ্যতে নতুন নিরাপত্তা যাচাই ও ব্যাকগ্রাউন্ড স্ক্রিনিং যোগ করা হতে পারে বলে নীতিমালা আলোচনায় উঠে এসেছে। যদিও এটি এখনো চূড়ান্ত নয়, তবুও বাংলাদেশি কমিউনিটির অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন।
লন্ডনের ইস্ট এন্ডে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাড়তি আয়সীমা এবং কর্মস্থল পরিবর্তনের নিয়ম কঠোর হওয়ায় তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। এক অভিবাসী জানান, পাঁচ বছর বৈধভাবে থাকলেও কাজের সংগতি বজায় রাখা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আইএলআর সংক্রান্ত নতুন নিয়মগুলোর পুরো নথি আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশ করবে হোম অফিস। অভিবাসন আইনজীবীরা পরামর্শ দিচ্ছেন, যারা পাঁচ বছরের বসবাসকাল পূরণের পথে রয়েছেন, তারা যেন আগে থেকেই প্রয়োজনীয় নথি ও আয়সংক্রান্ত হিসাব সাজিয়ে রাখেন।
লন্ডনে শীতের কুয়াশা আর ব্যস্ততার মাঝেও অভিবাসীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার উত্তাপ এখন সর্বত্র। নতুন নীতিমালা কার্যকর হলে বাংলাদেশের বৃহৎ প্রবাসী সম্প্রদায়ের জীবন ও পরিকল্পনায় বড় পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।










