মো: গোলাপ মিয়া, লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের আকাশ যেন আজ আরও একটু ভারী। আদিতমারীর গোবধা গ্রামে শনিবার দুপুরে যা ঘটল, তা শুধুই একটি ‘সংঘর্ষ’ বা ‘হত্যা’ নয়—এ ছিল এক মায়ের শেষ আত্মদান, এক সন্তানের জন্য প্রাণপণ ছুটে যাওয়া।
৮৫ বছরের আছিয়া বেগম নিজের শেষ শক্তিটুকু জোগাড় করে ছুটে এসেছিলেন তাঁর সন্তান জলিলকে বাঁচাতে। প্রতিপক্ষের হাতে যখন লাঠির আঘাতে ছেলেটি জর্জরিত, তখন মা আর বসে থাকতে পারেননি। তিনিও এসে দাঁড়িয়েছিলেন দেয়ালের মতো, বুক পেতে দিয়েছিলেন পাথরের আঘাতে। সেই বুকেই শেষ আঘাতটি এসেছিল—এবং সবকিছু নিস্তব্ধ হয়ে যায়।
জমির পরিমাণ ছিল মাত্র ৭৪ শতাংশ। জলিলের দখলে ছিল মাত্র ১০ শতাংশ, যেটুকুতে তিনি মাথা গোঁজার ঠাঁই করেছিলেন বহু বছর ধরে। আদালত, বৈঠক, সমঝোতা—সবই হয়েছিল, কিন্তু স্থায়ী হয়নি কোনো সমাধান। মতিয়ার রহমান গংদের দাবি ছিল—জলিল গংদের অন্যত্র জমি দেওয়া হবে। কিন্তু বসতভিটে তো শুধু মাটি নয়, সেখানে ছিল স্মৃতি, সেখানে ছিল সংসার।
শনিবার মতিয়ার গংরা যখন সেই জমিতে হাল চাষ শুরু করেন, জলিল গংরা বাধা দেন। একসময় উত্তেজনা চরমে ওঠে, শুরু হয় মারামারি। তখনই ছেলেকে রক্ষা করতে মাঠে নামেন মা আছিয়া বেগম। কিন্তু প্রতিপক্ষের লাঠি তাঁর শরীরে নেমে আসে নির্মমভাবে। এক আঘাতেই সব শেষ। মা ছেলের জন্য প্রাণ দিলেন, যেন এক চিরন্তন বলির প্রতীক হয়ে।
এই ঘটনায় আহত হন আরও তিনজন। তাঁদের লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, এখনই তাঁদের অবস্থা নিয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।
ঘটনার পর এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। আদিতমারী থানার অফিসার ইনচার্জ আলী আকবর জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত এক নারীকে তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
কিন্তু আছিয়া বেগম তো আর ফিরে আসবেন না। একজন মা, যিনি ছেলের মুখ দেখে বাঁচতে চেয়েছিলেন, শেষবারও সেই মুখটাই চোখে নিয়ে চলে গেলেন।
বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন: businesstoday24.com