শিপিং ডেস্ক: ভারতের বৃহত্তম বন্দর অপারেটর আদানি গ্রুপ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্র (ইউএস) ও যুক্তরাজ্যের (ইউকে) নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত জাহাজগুলোকে তাদের কোনো বন্দরেই ভিড়তে দেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে রাশিয়ান তেলবাহী একাধিক জাহাজ ইতোমধ্যেই গন্তব্য পরিবর্তন করেছে।
সম্প্রতি ‘নোবেল ওয়াকার’ নামের একটি তেলবাহী ট্যাঙ্কার, যেখানে প্রায় ১০ লাখ ব্যারেল রাশিয়ান ক্রুড তেল বহন করা হচ্ছে হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম করপোরেশন লিমিটেড (এইচপিসিএল)-মিত্তল এনার্জি লিমিটেডের (এইচএমইএল) জন্য, তা মূলত গুজরাটের মুন্দ্রা বন্দরে ভিড়ার কথা ছিল। তবে জাহাজটি ইইউ ও যুক্তরাজ্যের কালো তালিকাভুক্ত হওয়ায় এবং আদানি গ্রুপের নতুন নিষেধাজ্ঞার কারণে সেটি এখন দিক পরিবর্তন করে গুজরাটেরই ভাদিনার বন্দরের দিকে যাচ্ছে।
আদানি গ্রুপের নির্দেশনা
১১ সেপ্টেম্বর জারি করা এক আদেশে আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন (এপিএসইজেড) জানায়,“বন্দরের আইনি ও বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষায় নিষিদ্ধ জাহাজ গ্রহণযোগ্য নয়। বন্দরে ভিড়তে আসা প্রতিটি জাহাজের এজেন্টকে লিখিতভাবে নিশ্চিত করতে হবে যে জাহাজটি কোনো ধরনের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার আওতায় নেই।”
এই সিদ্ধান্তের ফলে গ্রুপটির ১৪টি বন্দর, যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মুন্দ্রা বন্দরও রয়েছে, সেখানে নিষিদ্ধ জাহাজ প্রবেশ করতে পারবে না।
রাশিয়ান তেল আমদানিতে প্রভাব
ভারত বর্তমানে সমুদ্রপথে রাশিয়ার তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সুযোগে ভারত সস্তায় তেল আমদানি বাড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে মুন্দ্রা বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছিল, যেখানে শুধু এইচএমইএল নয়, ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন (আইওসি)-এরও একাধিক রিফাইনারির জন্য তেল আসে।
তবে আদানি গ্রুপের এই পদক্ষেপের ফলে আইওসি বিকল্প বন্দর থেকে রাশিয়ান তেল আনার পরিকল্পনা করছে।
বাজার বিশ্লেষণ সংস্থা কেপলার জানিয়েছে, চলতি সেপ্টেম্বরের প্রথম নয় দিনে রাশিয়া থেকে ভারতে প্রতিদিন গড়ে ১৫.৫ লাখ ব্যারেল তেল পাঠানো হয়েছে, যা আগস্টের তুলনায় সামান্য বেশি।
মার্কিন চাপ ও বাণিজ্যিক উত্তেজনা
রাশিয়ান তেল আমদানির কারণে যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ শাস্তিমূলক শুল্ক সরাসরি রাশিয়ান তেল কেনার সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতোমধ্যেই জি-৭ মিত্রদের আহ্বান জানিয়েছেন ভারত ও চীনের ওপর শতভাগ পর্যন্ত শুল্ক বসানোর জন্য।
তবে ভারতীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই নীতির মূল লক্ষ্য এবং রাশিয়া থেকে তেল আমদানি অব্যাহত থাকবে।
নজরদারিতে আদানি গ্রুপ
আদানি গ্রুপ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রেও তদন্তের মুখে। মার্কিন বিচার বিভাগ খতিয়ে দেখছে, গ্রুপটির একটি সংস্থা ইরান থেকে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) আমদানি করেছে কি না—যা হলে সেটি আমেরিকান নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন হবে।
অন্য জাহাজও আলোচনায়
‘স্পার্টান’ নামের আরেকটি নিষিদ্ধ ট্যাঙ্কার সোমবার মুন্দ্রা বন্দরের কাছাকাছি অবস্থান করছিল বলে ব্লুমবার্গে প্রকাশিত কেপলার ও ভরটেক্সা’র তথ্য থেকে জানা গেছে। এতে অন্তত ১০ লাখ ব্যারেল ইউরালস ক্রুড বহন করা হচ্ছে এইচএমইএল-এর জন্য। এ জাহাজটিও ইইউ ও যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে।
শেয়ারবাজারে প্রভাব
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টা ৩৪ মিনিটে বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে আদানি পোর্টসের শেয়ারের দর দাঁড়ায় ১,৪০০.৪০ রুপিতে, যা আগের দিনের তুলনায় ৫.২০ রুপি বা ০.৩৭ শতাংশ বেশি।
সার্বিক প্রেক্ষাপট
- রাশিয়ান তেলের সবচেয়ে বড় সমুদ্র ক্রেতা ভারত।
- পশ্চিমা চাপ সত্ত্বেও ভারত তেল আমদানি চালিয়ে যাচ্ছে।
- আদানি গ্রুপের নতুন সিদ্ধান্তে তেল সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধরনের চাপ তৈরি হতে পারে।
- আন্তর্জাতিকভাবে আদানি গ্রুপ ও ভারতের জ্বালানি নীতি উভয়ই নতুন করে আলোচনায় এসেছে।










