Home সারাদেশ ছোট্ট উষা বার্ন ইউনিটে, মায়ের চোখে কেবল অন্ধকার

ছোট্ট উষা বার্ন ইউনিটে, মায়ের চোখে কেবল অন্ধকার

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের তৃতীয় তলার করিডোরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন এক মা—ইয়াসমিন আক্তার। মুখ দিয়ে যেন আর শব্দ বের হয় না, কেবল বিলাপ। হাউমাউ করে তিনি বারবার বলছেন, ‘আমার মেয়ের সব পুড়ে গেছে, তোমরা কেউ তার জ্বালা বন্ধ করো। আমি আমার মেয়ের কষ্ট সহ্য করতে পারছি না। আমার বুকটা খালি হয়ে যাচ্ছে।’

এই মা হচ্ছেন ইয়াসমিন আক্তার। তাঁর মেয়ে নুরে জান্নাত উষা পড়ত উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণিতে। সোমবার দুপুরে সেই স্কুল ভবনের ওপর ভেঙে পড়ে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। সেই আগুনেই ঝলসে যায় ছোট্ট উষার দেহ।

ঘটনার সময় ছোট ভাই তাহমিন ইসলাম রোহান বোনকে আনতে গিয়েছিলেন স্কুলে। ভাঙা কণ্ঠে সে বলল, ‘প্রতিদিনের মতোই বোনকে আনতে যাই। গিয়ে দেখি, স্কুলজুড়ে ধোঁয়া আর দগ্ধ মানুষের আর্তনাদ। প্রথমে খুঁজে পাইনি বোনকে। পরে ভেতরে গিয়ে দেখি, শরীর পুরোটাই পুড়ে গেছে। কীভাবে তাকে ধরব বুঝে উঠতে পারিনি। দ্রুত লুবনা হাসপাতালে নিয়ে যাই, সেখান থেকে এখানে আনি।’

বার্ন ইউনিটের তৃতীয় তলার করিডোরে তখন চারদিকে স্বজনদের কান্না। হাসপাতালের গেট থেকে শুরু করে লিফট পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে আহত শিশুর অভিভাবকদের মুখরেখায় অসহায়ত্ব। কারও মাথা ব্যান্ডেজে মোড়া, কারও বুকের ওপরে ছোট্ট করে চেপে ধরা এক চিলতে বেঁচে থাকা।

উষার শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে গেছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। তবে তার শ্বাসনালী কতটা আক্রান্ত হয়েছে, তা বোঝা যাবে আরও কিছু পর্যবেক্ষণের পর। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এক চিকিৎসক বলেন, ‘শিশুটির শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন, তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’

এদিকে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। আহত হয়েছেন ১৬৪ জন, যাদের বেশিরভাগই ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারী।

মাইলস্টোন স্কুলে নিয়মিত ছুটির পরপরই দুর্ঘটনাটি ঘটে। শিক্ষার্থীরা তখন গেটের পাশে লাইন ধরে দাঁড়িয়েছিল। ঠিক তখনই বিকট শব্দ করে আকাশ থেকে একটি যুদ্ধবিমান নেমে আসে স্কুল ভবনের ওপর। মুহূর্তেই আগুন, ধোঁয়া আর আতঙ্কে ছেয়ে যায় পুরো এলাকা। অনেকে দৌড়ে পালিয়ে বাঁচতে চেষ্টা করলেও অনেক শিশুই আগুনের ফাঁদে পড়ে যায়।

দুর্ঘটনার পর আহতদের মধ্যে যারা গুরুতর, তাদের অধিকাংশকেই আনা হয়েছে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে। যাদের শরীরে আগুন ধরেছিল, তাদের চিকিৎসার পাশাপাশি মনোবৈকল্য থেকেও সুরক্ষা দিতে চিকিৎসকেরা চেষ্টা করছেন।

আর হাসপাতালের করিডোরজুড়ে শুধুই কান্না—মায়ের, ভাইয়ের, বাবার, সহপাঠীর। যেন একটা যুদ্ধক্ষেত্র, যার শিকার শুধুই কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।