বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: সারা দেশে একাদশ শ্রেণির জন্য বিদ্যমান বিপুল সংখ্যক আসনের বিপরীতে শিক্ষার্থীর তুলনামূলক কম উপস্থিতি একটি উদ্বেগজনক পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে। বর্তমানে কলেজ ও মাদ্রাসায় একাদশ শ্রেণিতে মোট আসন রয়েছে প্রায় ২২ লাখ। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পর্যায়ে আরও ৯ লাখ এবং সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠানে রয়েছে প্রায় ২ লাখ ৪১ হাজার আসন। সব মিলিয়ে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৩ লাখ ২৫ হাজারের মতো।
অন্যদিকে, এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে মাত্র ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন শিক্ষার্থী। ফলস্বরূপ, প্রায় সাড়ে ২০ লাখ আসন শূন্য থাকার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। প্রতি বছর উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অন্তত ১০ শতাংশ একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয় না। এ বছরও যদি তা ঘটে, তাহলে শূন্য আসনের সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে। বিশেষ করে বেসরকারি কলেজগুলোর জন্য এটি একটি কঠিন সংকেত।
শিক্ষা বোর্ড জানিয়েছে, চলতি বছর জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হবে অনলাইনে আবেদন গ্রহণ। তিন ধাপে আবেদন ও মাইগ্রেশনের মাধ্যমে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ক্লাস শুরুর লক্ষ্য রয়েছে। দেশের প্রায় ২৫০টি মানসম্পন্ন কলেজে প্রতিযোগিতা বেশি হবে, বিশেষ করে ঢাকার ৩০টি কলেজে সবচেয়ে বেশি ভর্তিযুদ্ধ হবে। কারণ, এই কলেজগুলোর আসন সংখ্যা তুলনামূলক কম।
এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে প্রায় ১ লাখ ৩৯ হাজার শিক্ষার্থী। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, ২৫০টি মানসম্মত কলেজে আসন রয়েছে মাত্র ১ লাখের মতো। ফলে, জিপিএ ৫ প্রাপ্ত অনেক শিক্ষার্থী তাদের কাঙ্ক্ষিত কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে না। ঢাকার নটর ডেম, হলিক্রস, সেন্ট যোসেফ, ভিকারুননিসা, রাজউক, আইডিয়াল, রেসিডেনশিয়ালসহ কিছু কলেজে আসন সংখ্যা সীমিত থাকায় প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হবে।
২০২৪ সালের নীতিমালা অনুযায়ী, বর্তমানে ৯৩ শতাংশ আসনে মেধার ভিত্তিতে ভর্তি হয় এবং বাকি ৭ শতাংশ বিভিন্ন কোটায় বরাদ্দ থাকে। এর মধ্যে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় এবং ২ শতাংশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত। তবে চলতি শিক্ষাবর্ষে নীতিমালায় পরিবর্তনের প্রস্তাব এসেছে। মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রয়োজনীয়তা এখন আর নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং তার বদলে জুলাই কোটা সংযুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, জুলাই মাসে যারা সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশ নিয়ে আহত হয়েছেন, তাদের অনেকেই এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। কেউ কেউ চিকিৎসাধীন অবস্থায়ও পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। এ কারণে তাদের জন্য মানসিক ট্রমার প্রভাব বিবেচনা করে অস্থায়ীভাবে কোটা চালুর প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
এদিকে, কয়েকটি মিশনারি কলেজ নিজেদের ভর্তি প্রক্রিয়া আগের মতোই চালিয়ে যাচ্ছে। নটর ডেম, হলিক্রস এবং সেন্ট যোসেফ কলেজ হাইকোর্টের অনুমতি নিয়ে নিজস্ব নিয়মে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
গত বছর দেখা গেছে, প্রায় সাড়ে আট হাজার জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী প্রথম ধাপে কোনো কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়নি এবং অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়নি একটিও শিক্ষার্থী। এই পরিস্থিতি আমাদের শিক্ষানীতি ও অবকাঠামো পরিকল্পনায় বড় ধরনের পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তাকে সামনে নিয়ে এসেছে।
দেশজুড়ে লাখো আসন খালি, তবু মানসম্মত কলেজে তীব্র প্রতিযোগিতা—এই বাস্তবতা কি আপনি জানতেন? প্রতিবেদনটি যদি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, তাহলে একটি লাইক দিন এবং বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন।