বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হককে হাতুড়িপেটা করে হত্যা করে ২৬ খণ্ড করার হৃদয়বিদারক তথ্য উঠে এসেছে তদন্তে। র্যাবের দাবি, মূল অভিযুক্ত জরেজুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের আগে প্রচুর ইয়াবা সেবন করেন এবং হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন আশরাফুলকে। খণ্ড খণ্ড লাশ পাশের ঘরেই রাখা অবস্থায় জরেজ ও শামীমা রাত কাটায় এবং শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়।
এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে জরেজুল ইসলামের প্রেমিকা শামীমা আক্তার কোহিনুরকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩। শনিবার কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন। তিনি বলেন, শুক্রবার সকালে কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বড় বিজরা এলাকা থেকে শামীমাকে আলামতসহ গ্রেফতার করা হয়। পরিকল্পনা, ব্ল্যাকমেইলিং এবং লাশ গুমে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
র্যাব জানায়, গত ১১ নভেম্বর রংপুর থেকে ঢাকায় আসেন ব্যবসায়ী আশরাফুল হক। বন্ধু জরেজুল ইসলামের সঙ্গে ব্যবসায়িক পাওনা আদায়ের কথাবার্তাই তার ঢাকায় আসার কারণ ছিল। এরপর ১২ নভেম্বর সকাল থেকেই তার ফোন বন্ধ পেয়ে পরিবার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।
১৩ নভেম্বর হাইকোর্ট এলাকার পানির পাম্প সংলগ্ন দুইটি নীল রঙের ড্রাম থেকে ২৬ খণ্ডে বিভক্ত এক অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। পরে আঙুলের ছাপ বিশ্লেষণে নিশ্চিত হয় এটি নিখোঁজ আশরাফুল হকের লাশ।
গ্রেফতার শামীমার মোবাইল ফোন বিশ্লেষণ ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি ও জরেজ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন। জরেজ তাকে জানায় যে তার এক বন্ধুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করে দশ লাখ টাকা আদায় করা সম্ভব। এর মধ্যে সাত লাখ নেবে জরেজ এবং তিন লাখ দেওয়া হবে শামীমাকে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী শামীমা প্রায় এক মাস আগে থেকেই আশরাফুলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন এবং তাকে ধীরে ধীরে আকৃষ্ট করেন। নিয়মিত অডিও ও ভিডিও কলে তাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। ১১ নভেম্বর রাতে ঢাকায় এসে জরেজ এবং আশরাফুলের সঙ্গে শনির আখড়ার নূরপুর এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন শামীমা।
র্যাব জানায়, ব্ল্যাকমেইলের উদ্দেশ্যে আশরাফুলকে মালটার শরবতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে পান করানো হয়। অচেতন অবস্থায় বাইরে থেকে জরেজ এসে শামীমা ও আশরাফুলের অন্তরঙ্গ ভিডিও ধারণ করেন। এরপর ১২ নভেম্বর দুপুরে আশরাফুল সম্পূর্ণ অচেতন হয়ে পড়লে জরেজ তাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে মুখে কসটেপ লাগায়। ইয়াবার প্রভাবে উত্তেজিত জরেজ হাতুড়ি দিয়ে হত্যাকাণ্ডটি ঘটান। তারপর লাশ পাশের ঘরে রেখে দুজন একই বাসায় রাত কাটান।
পরদিন জরেজ বাজার থেকে চাপাতি ও দুটি ড্রাম এনে লাশ ২৬ খণ্ড করেন। পরে সিএনজি অটোরিকশায় করে হাইকোর্ট এলাকার কাছে ড্রাম দুটি ফেলে পালিয়ে যান। সেখান থেকে শামীমাকে কুমিল্লায় চলে যেতে বলা হয় এবং এরপর তাদের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
শামীমার দেখানো মতে শনির আখড়ার বাসা থেকে আশরাফুলের রক্তমাখা পাঞ্জাবি-পায়জামা, দড়ি, কসটেপ, একটি গেঞ্জি ও হাফপ্যান্ট উদ্ধার করেছে র্যাব। সংস্থাটির মতে, তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করা। তবে ব্যক্তিগত শত্রুতার বিষয় জড়িত আছে কি না তা জরেজকে জিজ্ঞাসাবাদের পর পরিষ্কার হবে।
গ্রেফতার শামীমা আক্তারকে আইনি প্রক্রিয়ার জন্য শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হবে বলে র্যাব জানিয়েছে।










