এভিয়েশন ডেস্ক:
মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে ছড়িয়ে পড়া যুদ্ধের উত্তাপে বিশ্বজুড়ে বড় ধরনের বিমান চলাচল সংকটে পড়েছে। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের বিমান হামলার পর পাল্টা প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় ইরান, ইরাক ও জর্ডান তাদের আকাশসীমা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে ইসরায়েলের তেল আবিবের বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে প্রতিদিন চলাচলকারী কয়েকশো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিমান করিডর হলো ইরান ও পূর্ব ইরাকের আকাশপথ, যেখান দিয়ে প্রতিদিন শতাধিক যাত্রী ও মালবাহী বিমান পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ইউরোপে যায় এবং ফিরে আসে। এই করিডর ব্যবহারের সুযোগ না থাকায় এয়ার ইন্ডিয়া, এমিরেটস, কাতার এয়ারওয়েজ, লুফথানসা, ইন্ডিগো, ফ্লাই দুবাইসহ বহু সংস্থা তাদের রুট পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে। বিকল্প রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে মিশর, সৌদি আরব, তুরস্ক, আজারবাইজান ও তুর্কমেনিস্তানের আকাশপথ। এতে উড়ানের সময় ও জ্বালানি খরচ বেড়ে গেছে।
এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, তারা অন্তত ১৬টি বিমানের রুট পরিবর্তন করেছে এবং কয়েকটি বিমানের যাত্রা মাঝপথ থেকে বাতিল করে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ইসরায়েলি বিমান সংস্থা এল আল এবং ইসরেয়ার তাদের সব ফ্লাইট সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে। ইসরেয়ারের ধারণা, অন্তত এক সপ্তাহ বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে।
ইসরায়েলের হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনা এবং কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। পাল্টা জবাবে ইরান শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়েছে ইসরায়েলের দিকে, যদিও অধিকাংশই বাতাসেই প্রতিহত করা হয়েছে বলে দাবি করছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
এই সংঘাতের ফলে শুধু বিমান পরিবহনই নয়, অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। শুক্রবার আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৭৫ ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা গত তিন মাসে সর্বোচ্চ। সোনার দামও বেড়েছে এক শতাংশ। শেয়ারবাজারে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো সতর্কবার্তা জারি করেছে। আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (আইকাও) বিমান সংস্থাগুলোকে উচ্চঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে। অতীতে যুদ্ধক্ষেত্রে যাত্রীবাহী বিমান গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।
সারসংক্ষেপ:
- ইরান, ইরাক, জর্ডানের আকাশসীমা বন্ধ
- ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ
- শতাধিক আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল বা রিরাউট
- বিকল্প রুটে বিমান চলাচলে সময় ও খরচ বেড়েছে
- তেল-সোনা ও শেয়ারবাজারে প্রভাব
- বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আগামী কয়েকদিন বা সপ্তাহজুড়ে বিমান ভ্রমণ আরও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে।