Home রাজনীতি ঈদে গ্রামে জমজমাট গণসংযোগ, ভোট নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে

ঈদে গ্রামে জমজমাট গণসংযোগ, ভোট নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে

সরেজমিন প্রতিবেদন

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, আনোয়ারা, ( চট্টগ্রাম): ঈদের ছুটি ঘিরে পাড়া-গাঁয়ের রাজনীতিতে যেন লেগেছে বাড়তি উত্তাপ। একদিকে ধর্মীয় উৎসব, অন্যদিকে সামনে জাতীয় নির্বাচন। ফলে  গ্রাম ও মফস্বল এলাকাগুলো পরিণত হয়েছে একপ্রকার অনানুষ্ঠানিক রাজনৈতিক মঞ্চে।

স্থানীয় রাজনীতিকরা ঈদের ছুটিকে কাজে লাগিয়ে নেমে পড়েছেন গণসংযোগে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে শুভেচ্ছা জানানো, ঈদ পুনর্মিলনী, নৈশভোজ, এবং খোলামেলা কুশল বিনিময়ের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁরা।

গ্রামীণ রাজনীতিতে সবচেয়ে সক্রিয় দেখা গেছে বিএনপি, জামায়াত এবং নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি)। ঈদের জামাত, পশু কোরবানি কিংবা হাটে-বাজারে ‘ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলন’ নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে প্রচারে ছিলেন বিএনপি কর্মীরা। জামায়াতও বিভিন্ন এলাকায় পারিবারিক বৈঠক ও ইসলামী রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে আলোচনা সভা করেছে।

এনসিপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চট্টগ্রাম বিভাগজুড়ে সংগঠন পুনর্গঠনের কাজ চলছে। দলটির এক শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, “আমরা গণমুখী রাজনীতি করতে চাই।”

তবে ঈদের এই রাজনীতির মাঝেও জনগণের মাঝে দেখা দিয়েছে এক ধরনের সন্দেহ ও অসন্তোষ। অনেকেই বলছেন, “বছরজুড়ে কারো দেখা নেই, ভোট এলেই নেতারা হাজির।”

অন্যদিকে আনোয়ারার কিছু এলাকায় চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও সন্ত্রাসের অভিযোগে শুরু হয়েছে নতুন করে উত্তেজনা। বিশেষ করে আনোয়ারা উপজেলার ‘সরকারহাট বাজার’-এ পশু প্রতি হাসিল হিসেবে আদায় করা হয়েছে তিন হাজার টাকা। এর মধ্যে পাঁচশো টাকা কাটা হয়েছে বিক্রেতার কাছ থেকে, বাকি আড়াই হাজার ক্রেতার পকেট থেকে। স্থানীয় সূত্র জানায়, এই অর্থের বড় একটি অংশ দিতে হয়েছে একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের উদীয়মান নেতাকে—যিনি কোরবানিকে কেন্দ্র করে দলের ভেতর নিজের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করছেন।

এই অর্থ আদায়ে ব্যবহার করা হয়েছে পেশিশক্তি। বাজারে থাকা সাধারণ ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা ছিলেন একপ্রকার জিম্মি অবস্থায়।

চাতরী চৌমুহনী বাজারেও দেখা গেছে এমন দখলদারি। রাস্তার অধিকাংশ জায়গা দখল করে বসানো হয়েছে মৌসুমি দোকান, যার ফলে যানচলাচল ও পথচারীদের চলাফেরা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। অভিযোগ, এসব কর্মকাণ্ডের পেছনেও রয়েছে সেই একই নেতার নাম।

এতে করে স্থানীয়ভাবে দলটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে এবং অভ্যন্তরীণভাবে নেতাকর্মীদের মধ্যেও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ছে।

 ঈদ পালনে তাই এবার ধর্মীয় উৎসবের পাশাপাশি ঘরে ঘরে, হাটে-বাজারে চলেছে রাজনীতির গুঞ্জন। কোরবানির পশুর পাশে দাঁড়িয়েও উচ্চারিত হয়েছে নির্বাচনী প্রতীক, দলীয় স্লোগান ও ভোটের প্রশ্ন।

জনগণের অভিমান ও রাজনৈতিক দলগুলোর সংকল্পের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে এক সূক্ষ্ম নির্বাচনী প্রস্তুতি। শেষ পর্যন্ত কে টিকে থাকবে তা নির্ভর করছে আগামী কয়েক মাসের মাঠপর্যায়ের রাজনীতির গতিপ্রবাহের ওপর।