ধারাবাহিক প্রতিবেদন: উত্তরের জীবনরেখা – কুড়িগ্রামকে জানুন কাছ থেকে
পর্ব ৯:
নয়ন দাস, কুড়িগ্রাম: এক সময় ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জেলা’ হিসেবে কুড়িগ্রামের নাম উচ্চারিত হতো সহানুভূতির সুরে। অথচ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেই চেহারায় কিছুটা হলেও বদল এসেছে। বদল এসেছে সরকারি প্রকল্প, অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে।
তবে প্রশ্ন থেকে যায়—এই উন্নয়ন কি শুধু উপরে উপরে? নাকি তা গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছেছে?
সড়ক ও সেতু নির্মাণে গতি
বিগত কয়েক বছরে কুড়িগ্রাম জেলায় ৭০ কিলোমিটারেরও বেশি নতুন সড়ক নির্মাণ হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলায় পুরনো কাঁচা রাস্তা এখন পিচঢালা।
উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে—
- চিলমারী-রৌমারী সড়ক প্রশস্তকরণ
- উলিপুরের বুড়াবুড়ি হয়ে নাগেশ্বরী সংযোগ সড়ক
- ভুরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ী উপজেলায় নতুন গ্রামীণ ব্রিজ নির্মাণ
সময়ে চালু হয়েছে চিলমারী উপজেলার দুটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগসেতু, যেগুলো বর্ষায় নদী-বিচ্ছিন্ন গ্রামগুলোকে সারা বছর যোগাযোগে রেখেছে।
স্থানীয় কৃষক লুৎফর রহমান জানান, “আগে ধান বিক্রি করতে নদী পার হতে হতো নৌকায়। এখন গাড়িতে করে চাল নিয়ে বাজারে যেতে পারি।”
গ্রামীণ বিদ্যুৎ: অন্ধকারে আলো
‘আলোকিত কুড়িগ্রাম’ প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে জেলার ৯০ শতাংশ গ্রামে।
আগে যেখানে সন্ধ্যার পর গ্রাম ঢেকে যেত অন্ধকারে, এখন সেখানকার ঘরবাড়িতে জ্বলছে বৈদ্যুতিক বাতি, চলছে ফ্যান, কখনো কখনো টেলিভিশনও।
২০২৩ সালের তথ্যমতে, কুড়িগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় প্রায় ২ লক্ষ ৭৫ হাজার পরিবার বিদ্যুৎ সুবিধার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
উপজেলার এক নারী উদ্যোক্তা বললেন, “আগে সেলাই মেশিন চালাতে কষ্ট হতো। এখন বিদ্যুৎ আছে, তাই রাতে কাজ করতে পারি।”
তবে চ্যালেঞ্জও রয়েছে—বিদ্যুতের লো-ভোল্টেজ, লোডশেডিং, ওয়ারিং খরচ, এবং সময়মতো সংযোগ না পাওয়া।
কাগজে-কলমে উন্নয়ন, বাস্তবে?
যদিও সরকারি হিসাবে উন্নয়ন দেখানো হচ্ছে, বাস্তবে অনেক জায়গায় এখনও ব্রিজ আছে কিন্তু সংযোগ রাস্তা নেই। বিদ্যুৎ এসেছে কিন্তু মিটার বসাতে মাসের পর মাস লেগে যায়।
কুড়িগ্রামের চরের মানুষ এখনো বলেন, “আমাদের বাড়ির পাশে বিদ্যুতের খুঁটি, কিন্তু তার নাই।”
অধিকাংশ উন্নয়ন হচ্ছে উপজেলা সদর বা বাজারকেন্দ্রিক। চর, দুর্গম এলাকা কিংবা বন্যা-প্রবণ গ্রামের উন্নয়ন ধীরগতির।
স্বপ্নের কথা: রেল ও আইটি পার্ক
কুড়িগ্রাম-ঢাকা আন্তঃনগর ট্রেন ‘কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস’ চালু হয়েছে ২০১৯ সালে। এটি জেলার উন্নয়ন ভাবনার একটি বাস্তব পদক্ষেপ।
আরও রয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির আওতায় রাজারহাটে প্রস্তাবিত আইটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, যা এখনো নির্মাণাধীন।
সম্ভাবনা বনাম বাস্তবতা
উন্নয়ন শুরু হয়েছে, কিন্তু সেটি কতটা সমতাভিত্তিক?
চরাঞ্চল, সীমান্ত, নদীভাঙন এলাকার মানুষ এখনো পিছিয়ে।
পর্যাপ্ত বাজেট, জবাবদিহি, এবং স্থানীয় চাহিদাভিত্তিক পরিকল্পনা ছাড়া এ উন্নয়ন স্থায়ী হবে না—বলছেন সচেতন মহল।
📢 আপনার চোখে কুড়িগ্রামের উন্নয়ন কীভাবে এগোচ্ছে? এই প্রতিবেদনটি শেয়ার করে জানান—আপনি কি মনে করেন এই অগ্রগতি টেকসই? কমেন্টে লিখুন আপনার অভিজ্ঞতা।