Home আকাশ পথ মধ্যপ্রাচ্য আকাশসীমায় অনিশ্চয়তা: এভিয়েশন ও বাণিজ্যে চরম চাপ

মধ্যপ্রাচ্য আকাশসীমায় অনিশ্চয়তা: এভিয়েশন ও বাণিজ্যে চরম চাপ

এভিয়েশন ডেস্ক:

মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক উত্তেজনা এখন শুধু আঞ্চলিক নয়, বরং বৈশ্বিক এভিয়েশন শিল্প ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে। বিশেষত ইরান যদি আকাশপথে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বা মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়, তবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল, পণ্য পরিবহন ও জ্বালানির সরবরাহব্যবস্থা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক রুট, বিশেষত ইউরোপ থেকে এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সংযোগকারী ফ্লাইটগুলোর একটি বড় অংশ মধ্যপ্রাচ্যের আকাশসীমা অতিক্রম করে। ইরান, ইরাক, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, বাহরাইনের আকাশসীমা ব্যবহার করেই এই ফ্লাইটগুলো পরিচালিত হয়। কিন্তু সংঘাত ঘনীভূত হলে এই অঞ্চলগুলো হয়ে উঠবে উচ্চঝুঁকিপূর্ণ।

বহু আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন এরইমধ্যে ইরান ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের আকাশসীমা এড়িয়ে চলার প্রস্তুতি নিয়েছে। কাতার এয়ারওয়েজ, এমিরেটস, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজসহ বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন বিকল্প রুটে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা করছে। এতে করে ফ্লাইট সময় গড়ে ১ থেকে ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে, ফলে জ্বালানির ব্যবহার বাড়বে, খরচ বাড়বে এবং যাত্রীদের জন্য টিকিটের মূল্যও বাড়বে।

শুধু যাত্রী পরিবহন নয়, সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসবে এয়ার কার্গো বা বিমানপথে পণ্য পরিবহনে। উচ্চমূল্যের ও দ্রুত ডেলিভারির প্রয়োজন এমন পণ্য—যেমন ওষুধ, ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ, গার্মেন্টস স্যাম্পল, মূল্যবান ধাতু ইত্যাদি—ব্যবসায়িকভাবে অনেকটা বিমান পরিবহনের ওপর নির্ভরশীল। বিমান চলাচল ব্যাহত হলে এসব পণ্যের ডেলিভারিতে দেরি হবে এবং ব্যবসায়িক চুক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষক ও এভিয়েশন নিরাপত্তা পরামর্শকরা বলছেন, আকাশপথের অনিরাপত্তা শুধু বাণিজ্যের ওপর চাপই তৈরি করবে না, বরং বিমা খরচ ও রুট ব্যবস্থাপনায় নতুন জটিলতা তৈরি করবে। বিমান সংস্থাগুলোকে নিরাপদ রুট খুঁজে বের করতে হবে, যার জন্য অতিরিক্ত খরচ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজন হবে।

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো যেহেতু মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক ও জনশক্তি যোগাযোগে জড়িত, তাই ফ্লাইট ঘনঘন বন্ধ হওয়া কিংবা বিলম্বিত হওয়া এসব দেশের জন্য নতুন সংকটের জন্ম দিতে পারে। রেমিট্যান্স, রপ্তানি আদান-প্রদান এবং ট্যুরিজম খাতে এর প্রভাব পড়তে পারে।

বিশ্ব অর্থনীতি এমনিতেই মুদ্রাস্ফীতি ও সরবরাহ সংকটে রয়েছে। এই এভিয়েশন অনিশ্চয়তা সেটিকে আরও জটিল করে তুলবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।