বিনোদন ডেস্ক: ২০০৩ সালে কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশে মাত্র ১৬ বছর বয়সে অ্যাঞ্জেলা জনসনকে বিয়ে করতে হয় ১৯ বছর বয়সী কেড জনসনকে। বিয়ের স্থান ছিল কোনো স্বপ্নের ভেন্যু নয়, বরং একটি লন্ড্রি দোকান। কারণ, তারা যে বহুবিবাহপ্রচারক চরমপন্থী ধর্মীয় গোষ্ঠীতে জন্মেছিলেন ফান্ডামেন্টালিস্ট চার্চ অফ জিসাস ক্রাইস্ট অফ ল্যাটার-ডে সেইন্টস—সেখানে বাইরের কারও প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল।
এই কাল্টের কুখ্যাত নেতা ওয়ারেন জেফস দীর্ঘদিন ধরেই শিশু যৌন নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন, যার মধ্যে ছিল তার নিজের সন্তানেরাও। ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই তাকে লাস ভেগাসে গ্রেপ্তার করে এবং ২০১১ সালে আজীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
অ্যাঞ্জেলার শৈশব কেটেছে এমন এক পরিবেশে যেখানে মেয়েদের দশম শ্রেণির পর পড়াশোনা বন্ধ করে দেওয়া হতো, শুধু অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়ার জন্য। কেডও বড় হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ অঙ্গরাজ্যের হিলডেল এলাকায়, যেখানে কাল্টের আরেকটি কেন্দ্র ছিল। বিয়ের পর প্রথম রাতে তারা দুজনেই একে অপরের পাশে শুয়ে ছিলেন, কিন্তু মনে ছিল অদ্ভুত শূন্যতা—‘আমরা আসলে কী করছি’ এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল।
অ্যাঞ্জেলা দ্রুত বুঝতে পারেন, এই বিবাহ তার জন্য নয়। তিনি স্বাধীনভাবে গান শুনতে, বাইরে ঘুরতে এবং নিজের মতো করে বাঁচতে চেয়েছিলেন। কেড নিজেও কাল্টের কড়া নিয়ম ভেঙে মাঝে মাঝে গান শুনতেন, এমনকি মদও খেতেন। কিন্তু বিয়ের পর তাকে বলা হয়েছিল স্ত্রীকে “ধর্মীয় পথে” রাখাই তার কর্তব্য।
অ্যাঞ্জেলার এই “অবাধ্যতা”র জন্য তার বাবা-মা, কাল্টের নির্দেশে, তাকে এমন এক খালার কাছে পাঠিয়ে দেন যাকে আগে কখনও দেখেননি। কিন্তু সেখানেই নতুন জীবন শুরু হয় খালা তাকে অন্যভাবে জীবন দেখতে শেখান।
২০০৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে এক বন্ধুর মাধ্যমে অ্যাঞ্জেলা ও কেড আবার যোগাযোগ শুরু করেন। তখন কেড কাল্ট ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। প্রথমে অ্যাঞ্জেলা বিবাহবিচ্ছেদ চাইলেও, সময় কাটানোর পর বুঝতে পারেন তাদের মধ্যে অনেক মিল আছে। হাস্যরসের ছলে তিনি বলেন, “সে যখন সাঁতার কাটার সময় শার্ট খুলল, তখন ভাবলাম—ঠিক আছে, মন্দ না।” এক মাস পর তারা ঠিক করেন সম্পর্কটিকে আরেকবার সুযোগ দেবেন।
আজ তারা তিন সন্তানের সুখী দম্পতি সন্তানদের বয়স ১৮, ১৫ ও ৩। অ্যাঞ্জেলা এখন একজন প্রসূতি ও প্রসবকালীন সেবিকা, আর কেড একজন হেলিকপ্টার পাইলট। তারা পাহাড়ে সাইক্লিং, স্নোবোর্ডিং, অ্যাঞ্জেলার শিশুদের পোশাক ব্র্যান্ড ‘গ্লিমার্স’-এ কাজ করা এবং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়ে অতীতের ট্রমা কাটিয়ে উঠছেন। কেডের ভাষায়, “আমরা আমাদের সন্তানদের নিজেদের মতো করে বেড়ে উঠতে দিই।”
অ্যাঞ্জেলা বলেন, “আমার সন্তানদের হাসিখুশি দেখা—এটাই আমার সবচেয়ে বড় গর্ব।”