বিনোদন ডেস্ক: বিনোদন জগতে মুখ খুলতে কখনো কুণ্ঠিত হননি কঙ্গনা রানাউত। ‘মাফিয়া গ্যাং’, শিল্পজগতে প্রথাগত সুবিধা বা নেপোটিজম সবকিছুরই তিনি সরাসরি সমালোচনা করেছেন। এবারও তিনি নিজের মতামত স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে কঙ্গনা রানাউত সেটে পুরুষ অভিনেতাদের অশিষ্ট আচরণ এবং নারী সহকর্মীদের ছোট করে দেখার বিষয়ে সরাসরি কণ্ঠ দিয়েছেন।
Hauterrfly-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন করা হয়, “কোনও পুরুষ অভিনেতা থেকে কি কখনও অযাচিত আগ্রাসনের সম্মুখীন হয়েছেন?” কঙ্গনা উত্তর দেন, “আমি এতজন হিরোর সঙ্গে কাজ করিনি। আমার মূল সমস্যা ছিল, অনেক হিরোই খুবই বদতামীজ।” তিনি আরও বলেন, তিনি শুধু যৌন হয়রানির বিষয়েই নয়, বরং সেটে এমন আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন যা নারী সহকর্মীদের ছোট করে দেখায়।
তিনি জানান, “আমি কেবল যৌনভাবে নয়, বরং সেটে দেরি করে আসা, অশিষ্ট আচরণ করা, নায়িকাকে ছোট করে দেখা, পাশে সরিয়ে রাখা, ছোট ভ্যান দেওয়া—এইসব কারণে আমি সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি। অন্য মেয়েরা এসব স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়, তাই তারা ভাবতে থাকে, এরা কেন এত গর্বিত।” কঙ্গনার এই মন্তব্য থেকে বোঝা যায় যে, তিনি শুধুমাত্র নিজের মর্যাদা রক্ষা করতেই এই সব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। অন্যদের মতো অশিষ্ট আচরণ মেনে নেওয়া তার কাছে কখনো গ্রহণযোগ্য ছিল না।
কঙ্গনার সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি হলো রাজনৈতিক নাটক ইমার্জেন্সি, যা ১৭ জানুয়ারি মুক্তি পেয়েছে। এতে তিনি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন এবং পরিচালক হিসাবেও দায়িত্ব নিয়েছেন। সিনেমাটি ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ সালের ২১ মাসের জরুরি অবস্থার সময়কালকে কেন্দ্র করে, যা স্বাধীন ভারতের অন্ধকারতম অধ্যায় হিসেবে পরিচিত।
ছবিতে কঙ্গনার সঙ্গে অভিনয় করেছেন অনুপম খের, শ্রেয়স তলপড়ে, মহিমা চৌধুরী ও মিলিন্দ সোনম। ছবির বিষয়বস্তু রাজনৈতিক হলেও, বক্স অফিসে এটি প্রত্যাশিত সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। ছবির পর কঙ্গনা বিভিন্ন এওয়ার্ড শো ও চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির দিকে তীব্র মন্তব্যও করেছেন, যা নিয়ে আলোচনা ছড়িয়েছে।
কঙ্গনা রানাউত চলচ্চিত্র জগতে একাকী দাঁড়িয়ে নিজের মত প্রকাশের জন্য পরিচিত। নেপোটিজম, বিশেষ সুবিধা এবং শিল্পজগতের নানা রীতিনীতির বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদ নতুন নয়। এই সাক্ষাৎকারেও তিনি দেখালেন, কেবল নিজের কাজ বা সাফল্য নয়, বরং কর্মক্ষেত্রে সমান মর্যাদা ও সম্মান প্রতিষ্ঠা তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কঙ্গনার সাহসিকতা অনেক নারী শিল্পীকে অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে, যারা হয়তো এই ধরনের অশিষ্ট আচরণের মুখোমুখি হলেও তা প্রকাশ করতে পারছেন না।
কঙ্গনা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন চলচ্চিত্রের কাজের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ভিত্তিক সিনেমায় তার আগ্রহ থেকে বোঝা যায়, তিনি চলচ্চিত্রকে কেবল বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং সমাজের বিভিন্ন অন্ধকার দিক প্রকাশের এক শক্তিশালী হাতিয়ার হিসাবেও দেখেন। কঙ্গনার এই প্রকার বক্তব্য এবং সাহসী অবস্থান নিশ্চিতভাবে বলিউডে নারীর মর্যাদা রক্ষায় নতুন আলো এনে দিচ্ছে।