Home ইতিহাস ও ঐতিহ্য দেড় শতাব্দী পুরোনো ‘কফি হাউস’ ভাঙার চেষ্টা

দেড় শতাব্দী পুরোনো ‘কফি হাউস’ ভাঙার চেষ্টা

কফি হাউস

 

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: বহু রাজনীতি, সাহিত্য কিংবা চলচ্চিত্র আন্দোলনের সাক্ষী দেড় শতাব্দী পুরোনো কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের আইকনিক ‘কফি হাউস’ । এর নীচের তলার একাংশ ভাঙা হচ্ছিল। স্থানটি কোনও এক ব্যবসায়ী কিনেছেন। তাই পিলার ভেঙে সম্প্রসারণ করার চেষ্টা করছিলেন। তা জানাজানি হতেই ঘোর আপত্তি জানায় কফি হাউস কর্তৃপক্ষ। সঙ্গে সঙ্গে ডাকা হয় পুলিশ এবং খবর দেওয়া হয় কলকাতা পুরসভাতেও। এর জেরে আপাতত কাজ তো বন্ধ হয়েছে, কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই অনেক প্রশ্ন উঠেছে। এভাবে হেরিজেট বিল্ডিংয়ে ভাঙাভাঙি করা যায় কিনা, করা গেলেও কার অনুমতিতে এই কাজ করা হচ্ছিল, তা জানতে চান সকলেই।

বুধবারই কফি হাউস সোশ্যাল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন কলকাতা পুরসভায় এসে ডেপুটেশন জমা দিয়ে গেছে। তাঁরা মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গেও দেখা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। এই সংগঠনের সম্পাদক বলেছেন, যেভাবে নির্মাণকাজ হচ্ছিল তাতে বিল্ডিংটাই বিপর্যয়ের শিকার হতে পারে। তাই এমন কাজ যাতে না হয়, পুরসভা যাতে গোটা বিষয়টি নজরে রাখে, সেই কারণে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। তারা চান, একটি কমিটি গঠন করে কফি হাউস বিল্ডিংয়ের তদারকি করা হোক।

কলকাতা পুরসভা ইতিমধ্যে ব্যাপারটিতে হস্তক্ষেপ করে কাজ বন্ধ করিয়ে দিয়েছে। নোটিসও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কফি হাউস কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারছে না। তাঁদের বক্তব্য, এই মুহূর্তে কাজ বন্ধ মানে ভবিষ্যতে কাজ চালু হতে পারে না, এমনটা নয়। তাই তাঁরা এর পাকাপাকি সমাধান চান। কর্তৃপক্ষের কথায়, এই বিল্ডিং সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব প্রত্যেকের। কারণ এটি কলকাতা তথা বাংলার ঐতিহ্য।

আসলে কফি হাউসের দোতলার অংশ ছাড়া একতলা এবং ওপরতলার অংশ বেসরকারি সংস্থার হাতে। এবার সেটা ভাড়া দেওয়া না পুরোপুরি বিক্রি করে দেওয়া তা স্পষ্ট নয়। তাই এই বিল্ডিংয়ে কারা, কতটা নির্মাণ কাজ করতে পারে বা আদৌ করতে পারে কিনা তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। নির্মাণ কাজ করতে গেলে কার অনুমতি নিতে হবে, সে বিষয়টি নিয়েও তর্ক-বিতর্ক আছে। তাই নির্মাণকাজে বাধা পেয়ে ওই ব্যবসায়ী ক্ষুব্ধও হন। বাকবিতণ্ডায় জড়িয়েছিলেন কফি হাউসে আগতদের সঙ্গে। কারণ মূলত তাঁরাই প্রতিবাদ করে পুলিশ ডেকেছিলেন।

ছবি সংগৃহীত

কফি হাউস বহু ইতিহাসের সাক্ষী। ১৯৯১ সাল থেকে এই কফি সপ তথ্য সংস্কৃতি দফতরের অন্তর্গত। কফি হাউসের নিচে একটি বইয়ের দোকান রয়েছে। জানা যাচ্ছে, ওই দোকানটি শিলিগুড়ির কোনও এক অবাঙালি ব্যবসায়ী কিনে নিয়েছেন। অভিযোগ, এরপর তিনি দোকান বাড়ানোর জন্য, একতলার তিনটি পিলার ভেঙে দিয়ে আরও ছোট ছোট দোকান বানানোর চেষ্টা করছেন।

কফি হাউসের প্রেমীদের দাবি, অনেক দিনের পুরনো এই বিল্ডিং। পিলার ভেঙে দেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে গোটা ভবন। ক্ষতি হয়ে যেতে পারে কফি হাউস। সেই কারণে তাঁরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পুরসভা পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছেন। অভিযোগ দায়ের হয়েছে থানায়।

কফি হাউস সোশ্যাল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অচিন্ত লাহা বলেন, “দোকান হস্তান্তর হতে পারে। আমার আপত্তি নেই। কিন্তু সেই দোকান কিনে তার জায়গা বাড়ানোর জন্য বিল্ডিংয়ের পা কেটে উড়িয়ে দেওয়া হবে তা মেনে নেওয়া যায় না। এতে ভালবাসার কফি হাউসের ক্ষতি হবে। ১৫০ বছরে প্রথম এই ধরনের ক্ষতি হচ্ছে।

সংস্কৃতিমনা প্রতিটি বাঙালির অন্যতম প্রিয় জায়গা কফি হাউস-কলেজ স্ট্রিট কফি হাউস। প্রতিটি মানুষের সাংস্কৃতিক মন কফি হাউসের নিভৃত ধোঁয়ায় সৃষ্টিশীলতায় নিমগ্ন হয়। ঐতিহ্যবাহী কেশব চন্দ্রের বাড়ি থেকে আজকের কফি হাউসে বাঙালির প্রাণ পুরুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে সুভাষ চন্দ্র হয়ে সত্যজিৎ রায়, বুদ্ধদেব গুহ, শক্তি-সুনীল প্রমুখ ব্যক্তির স্মৃতিতে সমৃদ্ধ। তরুণ কবির আঁতুরঘর এই কফি হাউস।

ব্রাহ্মসমাজ, জাতীয় কংগ্রেস, ফরওয়ার্ড ব্লক, বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধ ইত্যাদি ইত্যাদি ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে কফি হাউস।