নাজমুল হাসান, চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নবম যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন (জেইসি) বৈঠকে নতুন এক বাণিজ্যিক সুযোগ উন্মোচিত হয়েছে। বৈঠকে পাকিস্তান সম্মতি দিয়েছে যে, বাংলাদেশ এখন করাচি বন্দর ব্যবহার করতে পারবে।
অপরদিকে, ঢাকা পাকিস্তানি বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার চেয়েছে। দুই দেশের এই পারস্পরিক প্রস্তাব দক্ষিণ ও পশ্চিম এশিয়ার বাণিজ্য রুটে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
করাচি বন্দর পাকিস্তানের প্রধান সমুদ্রবন্দর, যার মাধ্যমে দেশটি মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে বিশাল বাণিজ্য পরিচালনা করে। শিপিং সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বাংলাদেশ যদি এই বন্দর ব্যবহার করতে পারে, তাহলে কিছু ক্ষেত্রে পরিবহন সময় ও রুটের ঝুঁকি কমানো সম্ভব হবে। বিশেষ করে পশ্চিম এশিয়া, মধ্য এশিয়া ও আফ্রিকার বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি সম্প্রসারণে এটি দীর্ঘমেয়াদে সহায়ক হতে পারে।
বর্তমানে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য বিশেষ করে তৈরি পোশাক, চামড়াজাত দ্রব্য, ওষুধ, সিরামিক, হিমায়িত খাদ্য এবং জুটপণ্য প্রধানত চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর দিয়ে সরাসরি সমুদ্রপথে মধ্যপ্রাচ্য বা আফ্রিকায় পাঠানো হয়। এসব রুটে গন্তব্যভেদে সময় লাগে ১০ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত।
বিশ্লেষকদের মতে, করাচি বন্দর ব্যবহারের সুযোগ এলে বাংলাদেশি পণ্য পাকিস্তানের বন্দর হয়ে সহজে পৌঁছাতে পারবে পশ্চিম এশিয়া ও মধ্য এশিয়ার বাজারে। করাচি থেকে আফগানিস্তান, ইরান হয়ে মধ্য এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান ও কিরগিজস্তানে ট্রানজিট রুটে রপ্তানি করা সম্ভব। এ ছাড়া করাচি থেকে আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে সরাসরি সমুদ্র রুটও রয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি বিকল্প বাণিজ্যপথ হিসেবে কাজ করতে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, করাচি বন্দর ব্যবহারে কিছু বাস্তব চ্যালেঞ্জও থাকবে। বাংলাদেশের পণ্য প্রথমে চট্টগ্রাম বা মংলা থেকে করাচি পর্যন্ত পৌঁছাতে অতিরিক্ত ট্রানজিট খরচ গুনতে হবে। এতে পরিবহন ব্যয় ও সময় দুই-ই বাড়তে পারে। একই সঙ্গে পাকিস্তানের কাস্টমস ও ট্রানজিট প্রক্রিয়া মানতে হবে, যা প্রশাসনিকভাবে জটিল হতে পারে। ফলে এই রুটটি তাৎক্ষণিক লাভের চেয়ে দীর্ঘমেয়াদে কৌশলগত সুবিধা দেবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
চিটাগাং চেম্বারের সাবেক এক পরিচালক মনে করেন, “করাচি বন্দর ব্যবহার বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিকভাবে বড় অর্জন নয়, তবে এটি বাণিজ্য কৌশলের একটি পদক্ষেপ। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বাজারে রপ্তানির জন্য এটি বিকল্প রুট হিসেবে কাজ করতে পারে।”
বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরান হয়ে মধ্য এশিয়ার বাজারে প্রবেশ করতে নানা বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। করাচি বন্দর ব্যবহার সেই পথকে কিছুটা সহজ করতে পারে। পাশাপাশি এটি দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের একটি প্রতীকী ইঙ্গিত হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
করাচি বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য তাৎক্ষণিক অর্থনৈতিক সুবিধা সীমিত হলেও, নতুন ট্রানজিট রুট, রপ্তানি বাজার বৈচিত্র্য এবং কৌশলগত উপস্থিতি বৃদ্ধির দিক থেকে এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।










