বিনোদন ডেস্ক: নয়ের দশকের অন্যতম জনপ্রিয় বলিউড অভিনেত্রী করিশ্মা কাপুর। রাজ কাপুরের পৌত্রী এবং রণধীর-ববিতা কন্যা হয়েও শুধুমাত্র ‘স্টারকিড’ পরিচয়ের জোরে নয়, বরং নিজের অভিনয় প্রতিভা ও পরিশ্রমে বলিউডে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। রূপ, প্রতিভা, খ্যাতি—সবই পেয়েছিলেন, কিন্তু ব্যক্তিজীবনে স্থিরতা বা ভালোবাসা যেন কখনোই তাঁর ভাগ্যে জোটেনি।
করিশ্মার জীবনের গল্প শুরু হয় এক অভিনেত্রী মায়ের তীব্র নিয়ন্ত্রণ আর ভাঙা সংসারের ছায়ায়। মা ববিতা নিজেও একসময় বলিউডের অভিনেত্রী ছিলেন। কেরিয়ারের সবচেয়ে উজ্জ্বল সময়ে রাজ কাপুর-পুত্র রণধীর কাপুরকে বিয়ে করে সিনেমা ছাড়েন তিনি। রক্ষণশীল কাপুর পরিবারের বউ হিসেবে চলচ্চিত্রজীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন ববিতা। কিন্তু বিবাহিত জীবনে সুখী হতে পারেননি। তিক্ত সম্পর্কের জেরে দুই মেয়ে করিশ্মা ও করিনাকে নিয়ে আলাদা থাকতে শুরু করেন তিনি।
অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার প্রয়োজনেই ববিতা খুব অল্প বয়সে মেয়েকে সিনেমায় নামিয়ে দেন—যা পছন্দ ছিল না কাপুর পরিবারের কারও। ১৯৯১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘প্রেম কয়েদি’ দিয়েই বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন করিশ্মা। এরপর ‘আন্দাজ আপনা আপনা’, ‘সুহাগ’, ‘রাজা হিন্দুস্তানি’, ‘বিবি নং ১’, ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’-এর মতো একাধিক হিট ছবি তাঁকে পৌঁছে দেয় শীর্ষে। পাশাপাশি ‘ফিজা’ ও ‘জুবেইদা’র মতো চিন্তাশীল ছবিতেও প্রমাণ করেন নিজের অভিনয়গুণ। ‘দিল তো পাগল হ্যায়’ ছবির জন্য পান জাতীয় পুরস্কারও।
কিন্তু সাফল্যের সঙ্গে মেলেনি ব্যক্তিগত সুখ। করিশ্মার প্রেমের গল্পও বলিউডের ইতিহাসে আলোচিত। অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক একসময় এতটাই গভীর হয়েছিল যে অমিতাভ-জয়া নিজেরাই ঘোষণা করেছিলেন বাগদানের কথা। কিন্তু আচমকাই ভেঙে যায় সে সম্পর্ক। শোনা যায়, অর্থনৈতিক টানাপোড়েন ও ববিতার কিছু আর্থিক দাবি নিয়ে মতবিরোধই বিচ্ছেদের মূল কারণ ছিল। অভিষেককে ভালোবাসলেও মায়ের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারেননি করিশ্মা।
পরবর্তী সময়ে ২০০৩ সালে শিল্পপতি সঞ্জয় কাপুরকে বিয়ে করেন করিশ্মা। তবে সে সম্পর্কও ছিল অশান্ত। স্বামীর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে দুই সন্তানসহ আলাদা হয়ে যান তিনি। জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়ও তাঁকে এনে দেয় আরও একাকীত্ব। সম্প্রতি সঞ্জয় কাপুরের মৃত্যুর পর প্রাক্তন স্বামীর পরিবারে দেখা গিয়েছে করিশ্মাকে—দীর্ঘ সম্পর্কের অবসানের পরও দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়ে।
একসময় বলিউডে ঝড় তোলা এই অভিনেত্রীর জীবন যেন এক নিঃসঙ্গ অধ্যায়—যেখানে সাফল্যের ঝলকানির আড়ালে লুকিয়ে আছে ভালোবাসা হারানোর বেদনা। খ্যাতির আলোয় থেকেও করিশ্মা আজ একা, তবু তিনি বলিউডের ইতিহাসে থেকে গেছেন এক দৃঢ়, সংগ্রামী নারীর প্রতীক হয়ে।









