Home Third Lead বাংলাদেশের নিচে লুকিয়ে আছে ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঝুঁকি: কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশের নিচে লুকিয়ে আছে ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঝুঁকি: কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়

ছবি এ আই

 আমিরুল মোমেনিন, ঢাকা: বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ঘটনা দেশবাসী উদ্বিগ্ন। মাত্র ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প, মাটির ১০ কিলোমিটার গভীরে উৎসস্থল, দেশের বিভিন্ন এলাকায় কম্পন অনুভূত হয়েছে। এতে ১০ জনের মৃত্যু, ৬ শতাধিক আহত, এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে ভূতত্ত্ববিদরা এ পরিসংখ্যানে খুব অবাক নন। তাঁদের মতে, দেশের ভৌগোলিক ও ভূতাত্ত্বিক অবস্থাই এই ভূমিকম্পের মূল কারণ। আরও বড় মাত্রার কম্পনও ঘটতে পারত।

এই প্রেক্ষাপটে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক ড. মাইকেল স্টেকলারের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের ভূতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করছেন। তারা ২০০৩ সাল থেকে দেশজুড়ে কাজ করছেন, সরেজমিনে বিভিন্ন স্থানে মাটির অবস্থার খতিয়ান নিয়েছেন এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে GPS যন্ত্র বসিয়েছেন। পাশাপাশিই নিকটবর্তী অন্যান্য দেশেও এ ধরনের যন্ত্র বসানো হয়। এই যন্ত্রগুলোতে ধরা পড়ে ভূ-পাতের ক্ষুদ্র পরিবর্তনও। স্থায়ী GPS‑ডেটা বিশ্লেষণ করে গবেষকরা বাংলাদেশের মাটি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।

কী দেখাচ্ছে গবেষণা

স্টেকলারেরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ভূমি ধীরে ধীরে উত্তর-পূর্ব দিকে সরছে, বছরে মাত্র দু’ইঞ্চি। কিন্তু তা অবহেলা করার মতো নয়। বাংলাদেশের ভূ-পাত কেবল সরছে না, এটি মায়ানমারের নীচে থাকা ভূ-পাতের সঙ্গে সংঘর্ষ করছে। এর ফলে মাটির গভীরে চাপ তৈরি হচ্ছে। এই চাপ এক মুহূর্তে মুক্তি পেলে, তা অতি তীব্র ভূমিকম্পের উৎস হতে পারে।

ড. স্টেকলার বলেন, ‘‘গত অন্তত চারশো বছরে বাংলাদেশে অতি তীব্র কোনও ভূমিক্প হয়নি। এর ফলে মাটির নীচে যে চাপ জমেছে, তা একসাথে মুক্তি পেলে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।’’

কতটা বিধ্বংসী হতে পারে

‘Nature Geoscience’ পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, যদি বাংলাদেশের নিচের প্লেট একসাথে সরতে থাকে, তবে ভূমিকম্পের মাত্রা ৮.২–৯ পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। এমন তীব্র ভূমিকম্প এখানে আগে কখনও হয়নি। বাংলাদেশের ঢাকা-সহ বড় শহরগুলো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তবে গবেষকরা জোর দিয়ে বলছেন না, এই বিপর্যয় আগামী বছরেই ঘটবে; এটি ঘটতে কয়েক বছর বা কয়েকশো বছরও লাগতে পারে।

ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা

বাংলাদেশ-মায়ানমারের ভূ-পাতের সীমা প্রায় ১৫০ মাইল লম্বা, যার মধ্যে কোন অংশটি সবচেয়ে বিপজ্জনক হবে তা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। তবে রাজধানী ঢাকা, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলসহ নদীমধ্যবর্তী এলাকা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।

প্রস্তুতির আহ্বান

গবেষকরা স্থানীয় প্রশাসন ও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কাজ করছেন। তাদের বক্তব্য, ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ভূমিকম্পের জন্য ভবনগুলোকে ভূমিকম্প-সহনশীল করা, জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা, এবং জরুরি প্রস্তুতি গ্রহণ করা অপরিহার্য।

লাইক দিন 👍, শেয়ার করুন 🔁, এবং মন্তব্যে জানান আপনার মতামত!