Home স্বাস্থ্য কোমরের যন্ত্রণায় রাতেই হাসপাতালে, পরে ধরা পড়ল স্লিপড ডিস্ক

কোমরের যন্ত্রণায় রাতেই হাসপাতালে, পরে ধরা পড়ল স্লিপড ডিস্ক

হেলথ ডেস্ক:

চার সপ্তাহ আগে তুরস্কের একটি হোটেলে ঘুম থেকে উঠে কোমরে তীব্র যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়েন ৫৮ বছর বয়সী ব্রিটিশ টেলিভিশন প্রযোজক টম হেইস। হঠাৎ অসহ্য এই ব্যথায় বিছানা থেকে উঠতেও পারছিলেন না তিনি। এক সহকর্মীকে ডেকে এনে তাকে সাহায্য নিতে হয়। পরদিনই স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি হলে জানা যায়, তিনি স্লিপড ডিস্ক বা হার্নিয়েটেড ডিস্কে আক্রান্ত হয়েছেন।

টম বলেন, “এরকম ব্যথা আমি আগে কখনও অনুভব করিনি। একবার পা ভেঙেছিল, গোড়ালি ভেঙে দশ জায়গায় চূর্ণ হয়েছিল কিন্তু তার চাইতেও এই ব্যথা অনেক বেশি ছিল। ঠিক কী হয়েছিল বুঝতেই পারছিলাম না।”

হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারেন, এটি একটি প্রচলিত সমস্যা—ডিস্ক সরে গিয়ে নার্ভে চাপ পড়ে এমন ব্যথা হয়।

কী এই স্লিপড ডিস্ক?
স্পাইন সার্জন ড্যামিয়ান ফাহির ভাষায়, “মেরুদণ্ডের হাড়ের মাঝখানে থাকে স্পঞ্জের মতো ডিস্ক, যেগুলো আমাদের শরীরের ওজন বহন করে এবং বাঁকতে সাহায্য করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ডিস্কগুলো তাদের পানি ধরে রাখার ক্ষমতা হারায়, হয়ে ওঠে কঠিন ও ভঙ্গুর। এর ফলে হঠাৎ কোনো মোচড় বা চাপের কারণে ডিস্কের ভেতরের জেল বেরিয়ে গিয়ে নার্ভে আঘাত করে। ফলে দেখা দেয় প্রচণ্ড যন্ত্রণা।”

সাধারণত ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায় এবং পুরুষদের মধ্যে ঝুঁকি দ্বিগুণ।

ঝুঁকির কারণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, বয়স ছাড়াও আরও কিছু কারণে স্লিপড ডিস্কের ঝুঁকি বাড়ে—

পরিবারে এমন ইতিহাস থাকলে

ধূমপান করলে

অতিরিক্ত ওজন থাকলে

দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে, বিশেষ করে কুঁজো হয়ে

ভারী কাজ বা ভুল ভঙ্গিতে ভার তোলার সময়

প্রতিরোধ ও করণীয়

দীর্ঘসময় একটানা বসে না থেকে মাঝে মাঝে উঠে হাঁটাহাঁটি করা

কোর মাসল যেমন পেট, পিঠ ও কোমরের পেশি শক্তিশালী করা

ধূমপান বন্ধ রাখা ও শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা

ব্যায়ামের ক্ষেত্রে পাইলেটস, সুইমিং ও ওয়াকিং বেছে নেওয়া

ভার তোলার সময় হিপ ও হাঁটু ভেঙে নিচু হওয়া, শুধু কোমর বাঁকানো নয়

চিকিৎসা পদ্ধতি
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্লিপড ডিস্ক চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে বিশ্রাম, ব্যথানাশক ও হালকা ব্যায়ামের মাধ্যমে ভালো হয়ে যায়। তবে ব্যথা বাড়তে থাকলে ধাপে ধাপে চিকিৎসা নিতে হয়—
১. ব্যথানাশক ও বিশ্রাম
২. ফিজিওথেরাপি ও প্রয়োজনে এমআরআই স্ক্যান
৩. সঠিক জায়গায় স্টেরয়েড ইনজেকশন
৪. দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা ও দুর্বলতা থাকলে মাইক্রোডিস্কেকটমি নামক সার্জারি

সার্জারির ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে স্নায়ু ক্ষতি, ইনফেকশন ও পুনরায় ডিস্ক সরে যাওয়া। ফাহির ভাষায়, “৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই সার্জারির প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু কারও পায়খানা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা বা নিম্নাঙ্গে অনুভূতি হারানোর মতো উপসর্গ দেখা দিলে, সেটি জরুরি অবস্থা এবং দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।”

পুনর্বাসন ও সাবধানতা
সার্জির পর প্রথম দুই সপ্তাহ প্রতিদিন অর্ধঘণ্টা হাঁটা, এরপর ছয় সপ্তাহে হালকা ব্যায়াম ও ফিজিওথেরাপির পরামর্শ দেওয়া হয়। সম্পূর্ণ সেরে ওঠার জন্য প্রাথমিক তিন মাস বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হয়।

শেষ কথা
যে কারও হঠাৎ কোমর ব্যথা হতে পারে। তবে সচেতনতা, সঠিক অভ্যাস ও সময়মতো চিকিৎসা নিলে এই ব্যথা থেকে দ্রুত সেরে ওঠা সম্ভব।

আপনার আশপাশে কেউ এই সমস্যায় ভুগছেন? শেয়ার করে তাঁকে সচেতন করুন!
কমেন্টে জানান, আপনি কি কখনও কোমরের এই ব্যথায় ভুগেছেন?
স্লিপড ডিস্ক নিয়ে আরও তথ্য জানতে ফলো করুন বিজনেসটুডে২৪.কম
স্বাস্থ্যসচেতন প্রতিবেদন পেতে নিয়মিত পড়ুন বিজনেসটুডে২৪.কম
বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে এই প্রতিবেদনটি শেয়ার করুন—সচেতন হোক সবাই!