‘ক্লু লেস’ বা প্রমাণহীন মামলার ফাইলে জমে ছিল ধুলা। হঠাৎই যেন সিনেমার চিত্রনাট্যের মতো মোড় নেয় তদন্ত। শেষ পর্যন্ত স্ত্রী নিজেই খুলে দেন হত্যার জট।
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: রাউজানের এক মজা পুকুরে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে উদ্ধার হয়েছিল এক অজ্ঞাতনামা পুরুষের বস্তাবন্দি মরদেহ। কেটে গেছে দীর্ঘ আট বছর। ‘ক্লুলেস’ বা প্রমাণহীন মামলার ফাইলে জমে ছিল ধুলা। হঠাৎই যেন সিনেমার চিত্রনাট্যের মতো মোড় নেয় তদন্ত। শেষ পর্যন্ত স্ত্রী নিজেই খুলে দেন হত্যার জট। স্বামী নাজিম উদ্দিনের মৃত্যুর দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন নাসিমা আক্তার।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় চট্টগ্রামের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) গ্রেপ্তার করেছে আরও দুজনকে। তারা হলেন নাজিম উদ্দিনের ভাই জসিম উদ্দিন ও সিএনজি চালক আবুল কালাম।
সিআইডি চট্টগ্রামের বিশেষ পুলিশ সুপার ছত্রধর ত্রিপুরা মঙ্গলবার জানান, ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই রাউজানের এক পুকুর থেকে অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়, মৃত ব্যক্তি মালয়েশিয়া প্রবাসী নাজিম উদ্দিন।
তদন্তে উঠে আসে, ছেলের নিখোঁজের পর বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছিলেন নাজিম। স্ত্রীর সঙ্গে দাম্পত্য কলহ বেড়ে যায়। ঘটনার দিন এক ঝগড়ার সময় নাজিম স্ত্রীকে চড় মারলে, ধাক্কায় তিনি পড়ে যান দরজার চৌকাঠে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার।
স্ত্রী নাসিমা স্বামীর মৃত্যু ঢাকতে মরদেহ লুকিয়ে রাখেন বাড়ির একটি কক্ষে। পরে পাসপোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পুড়িয়ে ফেলেন এবং সবার কাছে দাবি করতে থাকেন যে নাজিম রাগ করে বিদেশে ফিরে গেছেন। সাত দিন পর ভাই জসিম ও চালক আবুল কালামের সহায়তায় মৃতদেহটি ফেলে দেওয়া হয় পাশের পুকুরে।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে আরও এক বিস্ফোরক তথ্য। নিহতের ভাই জসিম উদ্দিনের সঙ্গে ভাবি নাসিমার গোপন সম্পর্ক ছিল বলে দাবি সিআইডির। আর সেই সম্পর্ক আড়াল করতেই ভাইয়ের নিখোঁজ ডায়েরির নাটক সাজিয়ে হত্যাকাণ্ডে মদদ দেন জসিম।
পুলিশের দাবি, “দীর্ঘ ৮ বছর পর আমরা সত্যটা বের করতে পেরেছি। নাসিমা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।”
মানুষের বিশ্বাস, সম্পর্ক ও পারিবারিক জটিলতার এক ভয়াবহ পরিণতির নাম এই হত্যা। আট বছর ধরে এক নিখোঁজ নামের আড়ালে চাপা পড়ে ছিল এক নির্মম সত্য। সেই মুখোশ খুলে এখন প্রকাশ পেয়েছে এক ঘৃণ্য হত্যার কাহিনী।