Home স্বাস্থ্য খাবার দূষণ থেকে বাঁচান: কেন খাদ্য ও রাসায়নিককে আলাদা রাখবেন?

খাবার দূষণ থেকে বাঁচান: কেন খাদ্য ও রাসায়নিককে আলাদা রাখবেন?

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: আটা, চাল, চিনি, মসলা, অর্থাৎ আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যদ্রব্য এবং সাবান, টয়লেট্রিজ, কীটনাশক, অর্থাৎ রাসায়নিক দ্রব্য, একই স্থানে বা আলমারিতে সংরক্ষণ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এই অভ্যাস অজান্তেই আমাদের খাবারে রাসায়নিক সংক্রমণ ঘটাতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে।

কেন এই সহাবস্থান বিপদজনক?

খাদ্য এবং রাসায়নিক দ্রব্যের মিশ্র সংরক্ষণ মূলত দুটি প্রধান উপায়ে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি সৃষ্টি করে:

১. রাসায়নিকের বাষ্প ও গন্ধ শোষণ:

বিপজ্জনক উপাদান: সাবান, ডিটারজেন্ট, টয়লেট ক্লিনার, নেইল পলিশ রিমুভার বা কীটনাশকের মতো রাসায়নিক দ্রব্য থেকে এক ধরণের বাষ্প বা উগ্র গন্ধ নির্গত হয়।

খাদ্যের শোষণ ক্ষমতা: আটা, চাল, চিনি, ডাল, চা পাতা বা শুকনো মসলার মতো খাদ্যদ্রব্যের শোষণ ক্ষমতা অত্যন্ত বেশি। এগুলি খুব সহজেই আশেপাশের পরিবেশের গন্ধ এবং রাসায়নিক বাষ্প শোষণ করে নেয়।

সংক্রমণ: যদি সাবান বা কীটনাশক একই আলমারিতে রাখা হয়, তবে সেই রাসায়নিক বাষ্পগুলি খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে প্রবেশ করে এবং খাদ্যকে বিষাক্ত করে তোলে। ফলস্বরূপ, খাবার রান্না করার পরেও রাসায়নিকের গন্ধ বা স্বাদ অনুভূত হতে পারে, যা সরাসরি স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

২. সরাসরি দূষণ বা ছিটকে পড়া:

তরল রাসায়নিক: অনেক পরিষ্কারক বা কীটনাশক তরল বা পাউডার আকারে থাকে। অসাবধানতাবশত যদি এই রাসায়নিকের বোতল বা প্যাকেট সামান্য লিক করে বা উপচে পড়ে, তবে তা সরাসরি পাশের খাদ্য পাত্রের ওপর পড়তে পারে।

ক্রস-কন্টামিনেশন: একই হাত বা চামচ দিয়ে খাদ্যদ্রব্য ও রাসায়নিক ধরার কারণেও পরোক্ষভাবে খাদ্য দূষণ হতে পারে। এমনকি সাবানের গুঁড়ো বা ট্যালকম পাউডার বাতাসে মিশে খাদ্যদ্রব্যের উপরে সূক্ষ্ম স্তর তৈরি করতে পারে।

কীটনাশকের ঝুঁকি: বিশেষ করে ইঁদুর বা পোকামাকড়ের জন্য ব্যবহৃত বিষ বা কীটনাশক ভুলক্রমে খাবারে মিশে গেলে তা জীবনঘাতী বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।

  • স্বাস্থ্যঝুঁকি কী কী হতে পারে?
  • রাসায়নিক সংক্রামিত খাবার গ্রহণের ফলে তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদী উভয় ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে:
  • সমস্যার প্রকৃতি তাৎক্ষণিক প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব
    সাধারণ বমি বমি ভাব, পেট ব্যথা, ডায়রিয়া, মাথা ঘোরা। হজমের সমস্যা, ক্ষুধামান্দ্য, অ্যালার্জি, ত্বকের সমস্যা।
    গুরুতর তীব্র বিষক্রিয়া, শ্বাসকষ্ট, স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। লিভার বা কিডনির ক্ষতি, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, ক্যান্সার ঝুঁকি বৃদ্ধি।
  • করণীয়: দুটি পৃথক সংরক্ষণ ব্যবস্থা
  • খাদ্যকে রাসায়নিক দূষণ থেকে মুক্ত রাখতে হলে ‘দুটি পৃথক সংরক্ষণ ব্যবস্থা’ মেনে চলা অত্যাবশ্যক:
  • ১. খাদ্যদ্রব্যের জন্য সংরক্ষণ:

স্থান: রান্নাঘরের আলমারি, ক্যাবিনেট বা খাদ্য রাখার নির্দিষ্ট গুদাম ব্যবহার করুন। এই স্থানটি রাসায়নিক দ্রব্য থেকে অনেক দূরে এবং শুষ্ক হওয়া উচিত।

পাত্র: আটা, চাল, ডাল, মসলা, চিনি ইত্যাদি অবশ্যই বায়ুরোধী কাঁচ বা খাদ্য-গ্রেডের প্লাস্টিক বা স্টিলের পাত্রে সংরক্ষণ করুন। এটি গন্ধ শোষণ রোধ করবে।

উচ্চতা: খাদ্য পাত্রগুলি মেঝে বা অন্য কোনো তল থেকে কিছুটা উঁচুতে সংরক্ষণ করুন, যাতে মেঝে পরিষ্কারের সময় কোনো দূষণ না ঘটে।

  • ২. রাসায়নিক দ্রব্যের জন্য সংরক্ষণ:

স্থান: সাবান, শ্যাম্পু, ডিটারজেন্ট, টয়লেট ক্লিনার, কীটনাশক এবং অন্যান্য টয়লেট্রিজ রান্নাঘর বা খাদ্যের আলমারি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা একটি স্থানে রাখতে হবে। বাথরুমের ক্যাবিনেট, বা বাড়ির অন্য কোনো নির্দিষ্ট লক করা স্থান ব্যবহার করা যেতে পারে।

লক করা ব্যবস্থা: যদি বাড়িতে শিশু থাকে, তবে কীটনাশক বা অন্যান্য ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য অবশ্যই লক করা ক্যাবিনেট বা আলমারিতে সংরক্ষণ করতে হবে।

সিল করা: নিশ্চিত করুন যে রাসায়নিক পদার্থের সমস্ত পাত্র বা বোতল ভালোভাবে সিল করা আছে, যাতে কোনো বাষ্প বা তরল বাইরে না আসে।

আমাদের স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য খাদ্যের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করা প্রাথমিক দায়িত্ব। খাদ্য ও রাসায়নিকের মিশ্রণ কেবল একটি অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস নয়, এটি গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ। তাই সচেতন হোন এবং খাদ্য ও রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণে কঠোরভাবে দুটি পৃথক ব্যবস্থা অনুসরণ করুন।