বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ফেনী: বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের তিনটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনি ফেনী-১, বগুড়া-৭ ও দিনাজপুর-৩ আসনে প্রার্থী হচ্ছেন। সোমবার রাতে গুলশানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দলীয় ঘোষণায় বলা হয়, চেয়ারপার্সনের তিন আসনে অংশগ্রহণ কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এতে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। খালেদা জিয়ার সরাসরি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার খবর প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই ফেনীসহ উত্তরাঞ্চলের বিএনপি ঘাঁটিগুলোতে কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে।
ফেনীতে উৎসবের আমেজ
ফেনী-১ (ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া) এলাকায় খালেদা জিয়ার প্রার্থী হওয়ার খবরে দলীয় নেতাকর্মীরা আনন্দ মিছিল করেছেন। স্থানীয় বিএনপি নেতা নূরুল আলম বিজনেসটুডে২৪-কে বলেন, “দীর্ঘদিন পর নেত্রী মাঠে ফিরছেন—এটা আমাদের জন্য আশার খবর। তাঁর প্রার্থিতা পুরো ফেনীতে নির্বাচনী জোয়ার সৃষ্টি করবে।”
স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ফেনীতে খালেদা জিয়ার প্রভাব ঐতিহাসিকভাবে দৃঢ়। অতীতে এখানে বিএনপির শক্ত অবস্থান ছিল। দলের তৃণমূল কর্মীরা মনে করছেন, চেয়ারপার্সনের অংশগ্রহণে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মনোযোগও এলাকায় বাড়বে, যা সংগঠন পুনর্গঠনে সহায়ক হবে।
দলের কৌশল ও রাজনৈতিক গুরুত্ব
বিএনপি মনে করছে, খালেদা জিয়াকে প্রতীকীভাবে একাধিক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে দলীয় ঐক্য ও জনসমর্থনকে দৃঢ় করা যাবে। বগুড়া ও দিনাজপুরে তার প্রার্থী হওয়া উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক ভারসাম্য তৈরির কৌশল হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. হুমায়ুন কবির বলেন, “খালেদা জিয়ার প্রত্যাবর্তন বিএনপির রাজনীতিতে এক নতুন গতি আনবে। নির্বাচনের আগে এটি দলের মনোবল ও জনসম্পৃক্ততা দুই-ই বাড়াবে।”
আইনগত প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ
খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। তবে দলের আইনজীবীরা বলছেন, সাম্প্রতিক আদালতের কিছু রায়ে তাঁর প্রার্থিতার পথ উন্মুক্ত হয়েছে। বিএনপি আশাবাদী যে, ভোটের সময়ের আগেই সব আইনি জটিলতা নিরসন সম্ভব হবে।
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা, জোট রাজনীতি এবং প্রতিদ্বন্দ্বী দলের কৌশল, সবই এই তিন আসনে নির্বাচনের গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘদিন পর খালেদা জিয়ার প্রার্থিতা বিএনপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এক বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত। তাঁর নির্বাচনী প্রচারণা সরাসরি বা প্রতীকী যেভাবেই হোক, তা কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে।
ফেনীর এক ভোটার বিজনেসটুডে২৪-কে বলেন, “আমরা চাই নেত্রী আবার সংসদে ফিরুন। তাঁর নামেই এই এলাকার রাজনীতি জেগে ওঠে।”
চেয়ারপার্সনের প্রার্থিতা এখন শুধু দলের কৌশল নয়, বিএনপির মাঠের রাজনীতির প্রাণভোমরা হয়ে উঠছে। ফেনী থেকে শুরু করে উত্তরবঙ্গ পর্যন্ত এখন বিএনপি শিবিরে নির্বাচনী উচ্ছ্বাস। দলীয় নেতারা বলছেন, এই ঘোষণা শুধু নির্বাচন নয়, দলের নতুন সূচনার বার্তাও বয়ে এনেছে।








