মাহবুবুল হক, মাস্কাট ( ওমান ): মরুর তপ্ত বালুকারাশিতে আজ যেন শোকের শীতল বাতাস বইছে। ওমানের রাজধানী মাস্কাট থেকে শুরু করে সালালাহ, সোহার কিংবা সুরাই, যেখানেই বাংলাদেশিদের পদচারণা, সেখানেই আজ বিষাদের ছায়া।
বাংলাদেশের তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মহাপ্রয়াণে ওমান প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটিতে নেমে এসেছে গভীর শোক।
মঙ্গলবার ভোরের আলো ফোটার আগেই যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেগম জিয়ার ইন্তেকালের খবর ছড়িয়ে পড়ে, তখন অনেক প্রবাসীই কর্মস্থলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। খবরটি পৌঁছামাত্রই থমকে যায় প্রবাসীদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। মাস্কাটের রুই ও হামরিয়াহর মতো বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে প্রবাসীদের জটলা দেখা যায়। অনেকের চোখেই ছিল অশ্রু, কণ্ঠে ছিল প্রিয় নেত্রীকে হারানোর হাহাকার।
ওমানে বিএনপির একটি বিশাল সমর্থক গোষ্ঠী রয়েছে। দলটির স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ সমর্থকরা প্রিয় নেত্রীর মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন। মাস্কাটে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বসবাসরত প্রবাসী ব্যবসায়ী এবং বিএনপি কর্মী আব্দুল জলিল বলেন: “আমরা প্রবাসে থাকলেও আমাদের মন পড়ে থাকত দেশনেত্রীর স্বাস্থ্যের দিকে।
তিনি আমাদের জন্য ছিলেন গণতন্ত্রের মা। ভাবিনি প্রবাসে থাকা অবস্থায় এমন দুঃসংবাদ শুনতে হবে। আজ মনে হচ্ছে আমরা আমাদের মাথার ওপরের ছাদটি হারালাম।”
বেগম খালেদা জিয়ার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় ওমানের বিভিন্ন স্থানে প্রবাসীরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছেন। অনেক মসজিদে প্রবাসীরা একত্রিত হয়ে নেত্রীর জন্য চোখের জল ফেলে মোনাজাত করেছেন। ওমান শাখা বিএনপির পক্ষ থেকে শোক সভা ও গায়েবানা জানাজার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
অপেক্ষা শেষ বিদায়ের: টেলিভিশনের পর্দা আর অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রবাসীদের চোখ এখন ঢাকার দিকে। নেত্রীর শেষ বিদায়ের প্রতিটি মুহূর্ত তারা পরম মমতায় পর্যবেক্ষণ করছেন। সুদূর ওমান থেকে অনেক প্রবাসী আক্ষেপ করে বলছিলেন, যদি আজ দেশে থাকতেন, তবে শেষবারের মতো প্রিয় নেত্রীকে দেখার জন্য অন্তত একবার পল্টনে কিংবা শেরেবাংলা নগরে ছুটে যেতেন।
ওমানের শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের যে বিশাল অবদান, তার একটি বড় অংশই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার আমলের নেওয়া নানা উদ্যোগের ফসল বলে মনে করেন জ্যেষ্ঠ প্রবাসীরা। তাই এই শোক কেবল রাজনৈতিক নয়, বরং এক গভীর আত্মিক সম্পর্কের বিচ্ছেদ। মরুর বুকে ঘাম ঝরানো এই মানুষগুলোর দোয়ায় আজ বারবার ধ্বনিত হচ্ছে— “ভালো থাকুন ওপারে, হে আপসহীন নেত্রী।”










