বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঝিনািইদহ:ঝিনাইদহ জেলার গাছিরা খেজুরের রস সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পাড় করছে। এ বছর শীত একটু দেরীতে আসার ফলে গাছিরা যেন আরও বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
ঝিনাইদহের ৬ টি উপজেলার গাছিরা ভোরের আলো উঠার সাথে সাথে দা, ঠুঙ্গি, দড়া, বালিধরা, বালু ইত্যাদি সরঞ্জাম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ঝিনাইদহের সদর উপজেলার হাটগোপালপুর গ্রামের গাছি মশিয়ার রহমান জানান, ৫২ বছর ধরে গাছ কাটার কাজ করে আসছি। শীত পড়ার সাথে সাথে আমাদের খেজুর গাছ তোলার কাজ শুরু করে দিতে হয়। প্রথম দিকে গাছ গুলোর ডেগো পরিষ্কার করি তার ১৫ দিন পর চাচ দিই।চাচ শুকানোর পর আবার চোখ ও রস আসার জন্য কাটি। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০-৩৫ টার মতো গাছ তুলতে পারি। প্রতিটা গাছ তোলা পর্যন্ত বা রস সংগ্রহ করা পর্যন্ত ২৮০/= হারে নিয়ে থাকি।
এদিকে ফরিদপুর থেকে আসা আবিদুর রহমান গাছির সাথে কথা হয়। শীত আসার সাথে সাথে আমরা বিভিন্ন অঞ্চলে খেজুর গাছ তোলার জন্য আসি, এবছর এখনও পর্যন্ত ১৫০ টা গাছ তুলেছি। গাছিরা জানান, বাপ দাদার পেশা আকড়ে ধরে আছি। আজকাল এ প্রজন্মের সন্তানেরা এ কাজ করতে চাই না। গাছিদের গাছিদা’র দাম তুলানামূলক বেশি হবার কারণে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। এদিকে বিষয়খালী বাজারের কর্মকার ননী কুমার জানান, শীত পড়ার সাথে সাথে খেজুরগাছ তোলার দা’এর দাম বেড়ে যায়। লৌহ স্পাত মিস্ত্রিত একটি দা’এর মূল্য কমপক্ষে ১৯’শত টাকা। এছাড়া পূরাতন গাছিদাগুলোও মেরামত করতে দেখা যাচ্ছে। কর্মকাররা দিনরাত পরিশ্রম করছে। শীতের সাথে সাথে রসের হাঁড়ি তৈরী করতে বিষয়খালী খড়িখালীর পালেরা আগেভাগেই কাজ শুরু করে দিয়েছে।
নমিতা রানী পাল জানান, শীত আসার একমাস পূর্বেই আমাদের মাটি সংগ্রহ করতে হয়। এ সময় আমাদের রসের হাড়ির ব্যাপক চাহিদা থাকে। এ জন্য তৈরী করে থাকি। এ বছর দ্রব্য মূলের ঊর্ধ্বগতির কারণে ভাড়ের মূল্য আগের বছরের তুলনায় একটু বেশিই হবে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি অফিসার নূর-এ নবী জানান, এক সময় এ অঞ্চলে প্রচুর খেজুর গাছ দেখা যেত। কালক্রমে সেসব আজ শুধু স্মৃতিতেই আমরা বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি। বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি সম্মিলিত উদ্যোগে খেজুর গাছ আবার রোপণ করা হচ্ছে। এখানকার খেজুরগাছের রসের স্বাদ ও চাহিদা অত্যন্ত বেশি। খেজুর রসের ভিজাপিঠা, তাঁতরস, পায়েস, পাটালী যেন শীতকালে আমাদের নিত্য দিনের সঙ্গী। তাছাড়া খেজুরের কাচা রসের স্বাদ জিহ্বায় না পড়লে যেন শীতের সকালটাই মিষ্টি হয় না। এই অঞ্চলে চাহিদা মিটিয়ে গাছিরা বাইরেও খেজুর রস ও গুড় বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে থাকে। শীতের সময় এলেই গাছিরা খেজুরের গাছ তোলার জন্য দা, ঠুঙ্গি, দড়িসহ গাছ তোলার সকল উপকরণ আগে ভাগেই গাছিরা সংগ্রহ করে থাকে। শীত মৌসুমে কামারেরা গাছিদের দা তৈরি করতে তারাও ব্যস্ত সময় পার করে থাকে।
শীতকালে গাছিদের খেজুরের গাছ তুলতে হয়। কারণ শীত মৌসুমে খেজুরের রস সংগ্রহ করতে হয়। জেলা শহরের পাগলাকানাই গ্রামের গাছি জহিরুল ইসলাম জানায়, প্রতিটা গাছ তুলতে ৩০০ টাকা নিয়ে থাকি। এবছর তিনি ৩৫ টি গাছ তুলবেন। প্রথম দিন গাছ তোলার পর ৭ দিন পরে চাচ দিয়ে থাকে। ৮ দিন পর গাছেন লিপুতে থাকে। তার কিছুদিন পরেই রস সংগ্রহের জন্য পুরা দোমে গাছ কাটা শুরু হয়ে যায়। জেলা শহরের কর্মকার সরজিত অধিকারী জানায়, খেজুর গাছ তোলার দা আকার ভেদে ১৫’শত থেকে ১৮’শত দাম হয়ে থাকে। ঝিনাইদহ জেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার গাছিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার চুটলিয়া গ্রামের গাছি হাসান আলী জানায়, শীত কাল আসলেই খেজুর গাছ তোলার কাজ করে থাকি। আগে আমাদের এলাকাতে প্রচুর খেজুর গাছ ছিলো কিন্তু এখন আর তেমন একটা গাছ চোখে দেখা যায় না। তিনি আরো বলেন, গাছিদের অভাবে অনেক গাছ তোলা সম্ভব হয় না। কারণ এ প্রজন্মের সন্তানেরা এ পেশায় আসতে চায়না। ফলে গাছিদের অভাবে গাছ কাটা বন্ধ থাকে। ফলে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ দিনের পর দিন গ্রাম বাংলা থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
নিম্নচাপের ফলে টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে মুন্সীগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকায় আবাদকৃত বীজ আলুর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে রোপণ করা এসব বীজ আলু পচে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে আবারও বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে দেশের আলু উত্পাদনে শীর্ষ এ জেলার চাষিরা।