বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট এলাকায় সাংবাদিক পরিচয়ে একটি গেস্টহাউসে কক্ষে কক্ষে ঢুকে তল্লাশি চালানো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত হান্নান রহিম তালুকদার নিজেকে সাংবাদিক ও অনলাইন টিভি চ্যানেলের চেয়ারম্যান দাবি করলেও তার এসব পরিচয়ের পেছনে বাস্তব কোনো ভিত্তি পাওয়া যায়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওর সূত্র ধরেই তাকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হয়।
চান্দগাঁও থানা সূত্রে জানা গেছে, রবিবার রাতে গেস্টহাউস মালিকের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি মোড় এলাকা থেকে হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ১৪৩/৪৪৮/৩৮৫/৫০৬ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা মূলত অবৈধ অনুপ্রবেশ, চাঁদাবাজি এবং হুমকির অভিযোগকে অন্তর্ভুক্ত করে।
ভিডিওতে দেখা যায়, হান্নান নিজেকে সাংবাদিক ও ‘সিএসটিভি২৪’ নামক একটি টেলিভিশনের চেয়ারম্যান পরিচয় দিয়ে গেস্টহাউসের রেজিস্টার খাতা চেক করেন এবং অতিথিদের বিয়ে হয়েছে কি না তা প্রমাণ চেয়ে বসেন। একাধিক কক্ষে গিয়ে অতিথিদের সঙ্গে বিরক্তিকর ও প্রশ্নবাণে জর্জরিত আচরণও ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যায়। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। অনেকেই এই ঘটনাকে ‘অপসাংবাদিকতা’ ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তার চরম লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যা দেন।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারা বলছেন, হান্নান রহিম তালুকদার তাদের তালিকাভুক্ত সদস্য নন। তার পরিচয়পত্র ও সংবাদের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এ ছাড়া যে সংবাদপত্রের সম্পাদকের পরিচয় ব্যবহার করেছেন, সেটিরও কোনো বৈধ রেজিস্ট্রেশন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
চান্দগাঁও থানার ওসি আফতাব উদ্দিন জানান, “প্রাথমিক তদন্তে তার সাংবাদিকতার কোনো বৈধ প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তার আচরণ অনেকটাই হুমকিমূলক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। গেস্টহাউস কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা মামলা গ্রহণ করেছি।”
অন্যদিকে, হান্নান পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, তিনি নাকি একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির জন্য সেখানে গিয়েছিলেন। তবে আইনের চোখে এ ধরনের অভিযান আদালতের অনুমতি বা প্রশাসনিক নির্দেশ ছাড়া বেআইনি।
চট্টগ্রামের বিশিষ্ট নাগরিক সমাজ এবং শিক্ষক নেতারা এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, সাংবাদিকতা একটি দায়িত্বশীল পেশা, যার সঙ্গে অপসাংবাদিকতা ও ব্যক্তিগত হয়রানির কোনো সম্পর্ক নেই। এমন ঘটনায় আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত হান্নানকে আদালতে তোলা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে, ভাইরাল হওয়া ভিডিও নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যেও ক্ষোভ ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।