Home সারাদেশ দলীয় পরিচয়ে চাঁদাবাজি ও শ্লীলতাহানি : ভোলায় উত্তাল জনমত, তদন্তে প্রশাসন

দলীয় পরিচয়ে চাঁদাবাজি ও শ্লীলতাহানি : ভোলায় উত্তাল জনমত, তদন্তে প্রশাসন

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ভোলা: ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় চাঁদা না পেয়ে এক ব্যক্তিকে মারধরের পর তার প্রথম স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় শ্রমিকদল ও ছাত্রদল নেতাসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে। ঘটনায় ভুক্তভোগী স্বামী নিজেই বাদী হয়ে তজুমদ্দিন থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলার পর পুলিশ ভুক্তভোগী নারীকে ভোলা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছে। চলমান রয়েছে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রক্রিয়া।

ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৯ জুন (রোববার) দুপুরে, তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কামারপট্রি এলাকায়। থানায় দায়ের করা মামলায় নাম উল্লেখ করে অভিযুক্ত করা হয়েছে তজুমদ্দিন উপজেলা শ্রমিকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন, তার সহযোগী আলাউদ্দিন, তজুমদ্দিন সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. রাসেলসহ ছয়জনকে। মামলার তদন্তে সন্দেহভাজন হিসেবে বাদীর দ্বিতীয় স্ত্রীকেও আটক করে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

ভুক্তভোগী নারীর স্বামী অভিযোগ করেন, ঢাকায় প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন তিনি, আর তার দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রামের বাড়িতে বসবাস করেন। কিছুদিন আগে তিনি দুই স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসেন। ২৮ জুন রাতে দ্বিতীয় স্ত্রী তাকে ফোন করে বাড়িতে ডেকে পাঠান। তিনি বলেন, “তজুমদ্দিন বাজার এলাকায় পৌঁছালে ফরিদ, আলাউদ্দিন, রাসেলসহ আরও ৫-৭ জন আমাকে আটকে ফেলে। তারা আমার দ্বিতীয় স্ত্রীকে সামনে রেখে আমার কাছে ৪ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। আমি অস্বীকৃতি জানালে এসএস পাইপ দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে।”

অভিযোগ অনুযায়ী, খবর পেয়ে পরদিন সকালে প্রথম স্ত্রী ঘটনাস্থলে এসে কিছু টাকা দিলেও তা চাহিদার তুলনায় কম হওয়ায় অভিযুক্তরা আরও ক্ষিপ্ত হয়। তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই মারধর করে একটি ঘরে আটকে রাখে। পরে স্বামীকে বাইরে পাঠিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন অভিযুক্তরা। কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে স্বামী দেখতে পান, তার স্ত্রী কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। পরে স্ত্রীর মুখ থেকেই তিনি জানতে পারেন, তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী আরও বলেন, “ঘটনা জানালে আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আমার স্ত্রী পরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। অবশেষে ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশের সহায়তা নিই।”

তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, “মামলা রেকর্ডের পর ভিকটিমকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আমরা তদন্ত করছি এবং আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।”

ভোলা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, “নারীটিকে সোমবার রাতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে চিকিৎসা চলছে। পরীক্ষাগুলো প্রক্রিয়াধীন।”

বিএনপির তজুমদ্দিন উপজেলা আহ্বায়ক গোলাম মোস্তফা মিন্টু বলেন, “এ ঘটনায় যদি আমাদের কোনো অঙ্গসংগঠনের কেউ জড়িত থাকে, প্রমাণ মিললে তাদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয়দের একাংশ বলছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আগেও নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল, তবে প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলত না।