প্রতিদিন আড়াই কোটি টাকার চাঁদাবাজি
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে ভয়াবহ চাঁদাবাজির চিত্র তুলে ধরেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি মন্তব্য করেছেন, এই বন্দরে প্রতিটি ধাপে চাঁদাবাজি চলে এবং প্রতিদিন অবৈধভাবে অন্তত দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা আদায় করা হয়।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের গত এক বছরের সাফল্য ও অগ্রগতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
‘সোনার ডিম পাড়া হাঁস’ ও অতীতের মেয়ররা
অতীতের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সমালোচনা করে উপদেষ্টা বলেন, অতীতে যারা চট্টগ্রামের মেয়র হতেন, তারা মেয়রের চেয়ে বন্দরের রক্ষক হিসেবেই বেশি ভূমিকা পালন করতেন। তবে তাদের মানসিকতা ছিল বন্দরকে ‘সোনার ডিম পাড়া মুরগি’ মনে করে জবাই করে খেয়ে ফেলার মতো।
চাঁদাবাজির ধরণ বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘বন্দরের প্রতিটি জায়গায় চাঁদাবাজি হয়। ভেতরে দিনের পর দিন ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে, যেটা তাদের জায়গা না, সেখানেও কেউ না কেউ চাঁদা নিচ্ছে। আবার বাইরে বের করে দেওয়া হলে সেখানেও চাঁদা নেওয়া হচ্ছে।’’
অবৈধ আয় ও বর্তমান পরিস্থিতি
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সাখাওয়াত হোসেন জানান, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রতিদিন আনুমানিক দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা অবৈধভাবে আদায় হয়। তবে বর্তমান সরকার আসার পর এই চাঁদাবাজি অনেক কমেছে বলে দাবি করেন তিনি। পুরোপুরি বন্ধ করা গেছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি পাল্টা প্রশ্ন রাখেন, ‘‘বাংলাদেশে পুরোটা কমানো কি সম্ভব?’’ তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, আগের তুলনায় পরিস্থিতি অনেক নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
বন্দরের গতিশীলতা ও ব্যবসায়ীদের স্বস্তি
উপদেষ্টা জানান, বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির ফলে বন্দরের কার্যক্রমে গতি এসেছে। আগে যেখানে পণ্য খালাসে দিনের পর দিন সময় লাগত, এখন তা একদিন বা দেড় দিনে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, ‘‘ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞেস করুন, তারা শতভাগ খুশি। তারা বলছেন, স্যার যদি একটা ভালো কাজ করে থাকেন, তবে এটাই করেছেন।’’
পানগাঁও বন্দর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এতদিন সেখানে সরকার প্রতিবছর ২২ কোটি টাকা লোকসান দিত, তবে এখন থেকে লাভের মুখ দেখবে।
এনসিটি ও হাইকোর্টের রায়
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি নিয়ে হাইকোর্টের সাম্প্রতিক বিভক্ত রায়ের বিষয়েও কথা বলেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘‘আমি রায়ের বিরুদ্ধে যাচ্ছি না। তবে দুনিয়াজুড়ে ট্রিলিয়ন ডলারের ইনভেস্টমেন্ট হচ্ছে। এ পর্যন্ত বন্দরে এটিই সবচেয়ে বড় ইনভেস্টমেন্ট। যারা এটা নিয়ে আলোচনা করছেন, তারা নতুন বেঞ্চে বা প্রধান বিচারপতির শরণাপন্ন হতে পারেন।’’
উল্লেখ্য, গত ৪ ডিসেম্বর এনসিটি পরিচালনা নিয়ে করা রিটের ওপর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ বিভক্ত রায় দেন। জ্যেষ্ঠ বিচারপতি চুক্তি প্রক্রিয়া অবৈধ ঘোষণা করলেও কনিষ্ঠ বিচারপতি রিট খারিজ করে রায় দেন।










