বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: ৩৫ বছর পর আজ বুধবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা চলবে ভোটগ্রহণ। নির্বাচন ঘিরে পুরো ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।

ভোটে উৎসবের আমেজ
ভোর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ভোটারদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। ব্যানার-ফেস্টুনে সজ্জিত ক্যাম্পাস এখন এক উৎসবের নগরী। শিক্ষার্থীদের মুখে উৎসাহ-উদ্দীপনা স্পষ্ট। সকাল থেকে বিভিন্ন হলে নারী ভোটারদেরও উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি দেখা গেছে। প্রশাসন জানায়, ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থান নিয়েছে তারা।
নিরাপত্তায় দুই হাজার সদস্য
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দুই হাজার সদস্যের নিরাপত্তা বলয় গঠন করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিএনসিসি, রোভার স্কাউট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীরা দায়িত্বে রয়েছেন। র্যাবের আটটি ব্যাটালিয়ন টিমসহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও সাদা পোশাকে মাঠে আছেন। প্রতিটি অনুষদে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিশেষ টিমও কাজ করছে।
র্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, “ফলাফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত আমরা ক্যাম্পাসে অবস্থান করব। প্রয়োজনে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হবে।”
দুই প্যানেলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই
চাকসু নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির সমর্থিত দুই প্যানেলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা। শিক্ষার্থীদের মতে, দুই প্যানেলেরই মাঠে ভালো অবস্থান থাকায় লড়াই হবে সমানে সমান।
রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, “ছাত্রদল-শিবিরের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আমাদের জন্য ইতিবাচক। তারা এখন শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো শুনছে, সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। ভোটের মাধ্যমে আমরা যাচাই করব কারা প্রকৃত প্রতিনিধি।”
অন্যদিকে ছাত্রদলের প্যানেলের এক প্রার্থী বলেন, “আমরা জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। শিক্ষার্থীদের সমর্থন পেয়েছি। এবার চাকসুতে জয়ের মালা আমাদের গলায়ই উঠবে।”
ভোট পদ্ধতি ও সময়
ভোট গ্রহণ চলছে ব্যালট পেপারে, আর গণনা করা হবে ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিডার) পদ্ধতিতে। ভোটারদের ব্যালটে বৃত্ত পূরণ করে ভোট দিতে হচ্ছে। প্রতিটি ভোটারকে কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে ৪০টি পদে ভোট দিতে হবে—২৬টি কেন্দ্রীয় ও ১৪টি হল সংসদ পদে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, “একজন ভোটারের ভোট দিতে গড়ে ১০ মিনিট লাগবে। তবে সময়ের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, প্রয়োজনে অতিরিক্ত সময় নিতে পারবেন।”
প্রার্থী সংখ্যা
চাকসু নির্বাচনে মোট প্রার্থী ৯০৮ জন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৬টি পদে ৪১৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ২৪ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ২২ জন ও এজিএস পদে রয়েছেন ২১ জন প্রার্থী।
অন্যদিকে ১৪টি হল সংসদে লড়ছেন ৪৭৩ জন প্রার্থী—ছাত্রদের ৯টি হলে ৩৫০ জন এবং ছাত্রীদের ৫টি হলে ১২৩ জন।
মোট ভোটার
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ৫১৮ জন। এর মধ্যে ১৬ হাজার ১৮৯ জন পুরুষ ও ১১ হাজার ৩২৯ জন নারী ভোটার। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অনুষদ ভবনের ১৫টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হচ্ছে।
শাটল ট্রেন ও বাসের বিশেষ শিডিউল
নির্বাচন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শাটল ট্রেন ও বাস সার্ভিসের নতুন সময়সূচি ঘোষণা করেছে। সকালে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গামী ট্রেন ছেড়েছে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে ও ৮টায়। ষোলশহর স্টেশন থেকেও সকাল সাড়ে ৯টা, ১০টা ১৫ মিনিট, ১১টা ৩০ মিনিট ও দুপুর ১২টায় ট্রেন ছেড়ে গেছে। বিকাল ও রাতেও বিশেষ ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া নিউ মার্কেট ও ষোলশহর থেকে সকাল ৯টা ও ১০টায় মোট ১৫টি বাস বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। বিকালে আবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নগরীর উদ্দেশে বাস ছেড়ে যাবে ৩টা, ৪টা ও ৫টায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দফতরের প্রশাসক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোরশেদুল আলম বলেন, “শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে যেন সমস্যা না হয় সে জন্য বিশেষ শিডিউল দেওয়া হয়েছে।”
যান চলাচল সীমিত
প্রক্টর অফিস জানিয়েছে, নির্বাচনের দিন ক্যাম্পাসে যানবাহন চলাচল সীমিত রাখা হয়েছে। বহিরাগত গাড়ি প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। শুধু শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাচন কমিশন ও সংবাদকর্মীদের অনুমোদিত গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে। কাটা পাহাড়ের রাস্তা দিয়ে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়েছে।