Home Third Lead ফিরে দেখা চাকসু: ছাত্র রাজনীতির গৌরবময় ইতিহাস

ফিরে দেখা চাকসু: ছাত্র রাজনীতির গৌরবময় ইতিহাস

ছবি: এ আই
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, সংক্ষেপে চাকসু—এটি শুধু একটি সংগঠন নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক চর্চা, নেতৃত্ব বিকাশ এবং অধিকার আদায়ের ইতিহাসের এক গৌরবময় অধ্যায়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই চাকসু শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করেছে, একইসঙ্গে জাতীয় রাজনীতিতেও রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরপরই জন্ম নেয় এই ছাত্র সংসদ। শিক্ষার মানোন্নয়ন, সংস্কৃতিচর্চা, পারস্পরিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখার উদ্দেশ্যেই গঠিত হয়েছিল চাকসু। প্রতিষ্ঠার মাত্র চার বছর পর ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম চাকসু নির্বাচন।

প্রথম নির্বাচনে সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন মোহাম্মদ ইব্রাহিম এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) হন আব্দুর রব। এরপর ১৯৭২ সালের নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়নের শমসুজ্জামান হীরা ভিপি এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মাহমুদুর রহমান মান্না জিএস নির্বাচিত হন। তৃতীয় নির্বাচনে (১৯৭৪) জাসদ ছাত্রলীগের এসএম ফজলুল হক ভিপি এবং গোলাম জিলানী চৌধুরী জিএস নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে জাসদ ছাত্রলীগের মাজহারুল হক শাহ চৌধুরী ভিপি এবং ছাত্রলীগের জমির চৌধুরী জিএস পদে নির্বাচিত হন।

এরপর ১৯৮১ সালে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত জসিম উদ্দিন সরকার ও আবদুল গাফফার যথাক্রমে ভিপি ও জিএস নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ১৯৯০ সালের নির্বাচনে জাতীয় ছাত্রলীগের নাজিম উদ্দিন ভিপি এবং বাসদ ছাত্রলীগের আজিম উদ্দিন জিএস নির্বাচিত হন।

তবে একই বছরের ফেব্রুয়ারিতে ছাত্র ঐক্য নেতা ফারুকুজ্জামানের মর্মান্তিক নিহত হওয়ার পর চাকসু নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়। এর পর থেকে দীর্ঘ ৩৫ বছর অকেজো হয়ে পড়ে থাকে চাকসু—যেখানে একসময় সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও গণতান্ত্রিক চর্চার প্রাণ সঞ্চার হতো।

অবশেষে ছাত্রছাত্রীদের দীর্ঘ আন্দোলন ও দাবির মুখে ২০২৫ সালে আবারো চাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য চাকসুর পদাধিকারবলে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষার্থীরা সরাসরি ভোট দিয়ে সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস)সহ অন্যান্য পদে প্রতিনিধি নির্বাচন করে থাকে।

চাকসু শুধু একটি ছাত্র সংগঠন নয়, বরং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে গণতান্ত্রিক রাজনীতি পর্যন্ত নানা ঐতিহাসিক মুহূর্তে ছিল অগ্রণী ভূমিকায়। ৩৫ বছর পর পুনর্জাগরণের এ সময়টি তাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য যেমন গৌরবের, তেমনি নতুন ইতিহাস লেখার সুযোগও বটে।