এম আইউব
যশোর: দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার বাজার যশোরের রাজারহাট মঙ্গলবার প্রথমদিনে জমেনি। প্রথম হাটে আট থেকে ১০ হাজার চামড়া আসলেও দাম পাননি বিক্রেতারা। রাজারহাটে বিভিন্ন জেলার ক্ষুদ্র ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনে আনেন। কিন্তু আশানুরূপ দাম পাননি বলে অভিযোগ তাদের। বিশেষ করে ছাগলের চামড়া এক প্রকার বিনামূল্যে দিয়ে মন খারাপ করে বাড়ি ফিরেছেন বিক্রেতারা। একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ৪০ টাকায় চামড়া কিনে মাত্র পাঁচ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। আবার দিলিপ নামে একজন ক্ষুদ্র বিক্রেতা কেনা দাম না পেয়ে ছাগলের ১০ টি চামড়া ফেলে দেন বলে জানান। নড়াইল থেকে চামড়া আনেন তিনি।
সকাল আটটার পরপরই রাজারহাটে চামড়া আনতে শুরু করেন বিক্রেতারা। ১০ টার মধ্যে সব ব্যবসায়ী চলে আসেন ঈদের দিন থেকে কেনা চামড়া নিয়ে। কিন্তু হাটে এসে রীতিমতো হতাশ হন। কারণ এদিন বাইরের কোনো ক্রেতা আসেননি রাজারহাটে। স্থানীয় ক্রেতারা কিনেছেন সব চামড়া। এ কারণে ভালো দাম পাননি বাইরে থেকে আসা বিক্রেতারা।
এ বছর সরকার লবণযুক্ত গরুর চামড়া ৪০ থেকে ৪৪ ও ছাগলের চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা প্রতি বর্গফুটের দাম নির্ধারণ করেছে। রাজারহাটে ফিতা দিয়ে বর্গফুট মেপে চামড়া কিনতে দেখা যায়নি।
নড়াইল থেকে একশ’ গরুর চামড়া ও ১৩ টি খাসির চামড়া নিয়ে হাটে আসেন হীরামন বিশ্বাস। তিনি জানান, সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি করতে পারেননি। খাসির ১৩ টি চামড়া পাঁচ টাকা হিসেবে ৬৫ টাকা হয়। শেষ পর্যন্ত তাকে ১৩ টি চামড়ায় ৬০ টাকা দিয়েছেন স্থানীয় এক ক্রেতা। দাম কম পাওয়ার কারণ হিসেবে হীরামন বলেন, বাইরের ব্যাপারি না আসলে দাম বাড়ে না। ক্রেতা নেই বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এক প্রকার পানির দামে চামড়া কিনেছেন বলে দাবি তার।
নড়াইলের লক্ষ্মীপাশা থেকে ৪শ’ গরুর চামড়া নিয়ে আসেন নিমাই বিশ্বাস। তিনি জানান, সবচেয়ে ভালোমানের প্রতি পিচ চামড়া ১০৫০ টাকায় বিক্রি করেন। তবে, গাভীর চামড়া বিক্রি করেন ৪শ’৫০ থেকে ৫শ’ টাকায়।
৪৫ টি গরু ও ৪৫ টি ছাগলের চামড়া নিয়ে আসেন যশোরের কেশবপুরের বিশ্বনাথ নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি গরুর ৩৫ টি চামড়া ৭শ’, ছয়টি ১২শ’ ও চারটি ৩শ’ টাকা দরে বিক্রি করেন। বিশ্বনাথ ৪০ টাকা দরে ছাগলের চামড়া কিনে যথাক্রমে আট ও পাঁচ টাকায় বিক্রি করেন বলে জানান। হতাশার সুরে ব্যবসা ছেড়ে দেবেন বলে জানান তিনি।
বৃহত্তর যশোর চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল বলেন, ‘মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়া চেনেন না। তারা সময়মতো লবণ দেন না। এ কারণে চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। ফলে, তারা ভালো দাম না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তিনি মৌসুমী ব্যবসায়ীদের চামড়ার ব্যবসায় না আসার জন্য আহ্বান জানান।
চামড়া হাটের ইজারাদার ও ব্যবসায়ী হাসানুজ্জামান হাসু বলেন,‘প্রথম হাটে ৮-১০ হাজার চামড়া উঠেছে। বাইরের ক্রেতা না থাকায় বিক্রি তেমন ভালো হয়নি। ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেট করার কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ভালো দাম পাচ্ছেন না। আগামী শনিবারের হাট জমবে। ওইদিন বাইরের বেপারিরা আসবেন। একইসাথে ব্যাপক সংখ্যক চামড়া উঠবে।’ তিনি বলেন ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে যশোরের ব্যবসায়ীরা ২০১৮ সাল থেকে ১০ কোটি টাকা পাবেন। বিপুল অঙ্কের টাকা বকেয়া রেখে ট্যানারি মালিকরা আবারো চামড়া কিনে তাদের কাছে নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু তাদের কথা কেউ শুনছেন না। এ কারণে ক্রেতার সংখ্যা কমে গেছে।