Home কৃষি চারণভূমি সংকটে দুধ-মাংস উৎপাদন ঝুঁকিতে

চারণভূমি সংকটে দুধ-মাংস উৎপাদন ঝুঁকিতে

খামারিদের টিকে থাকার লড়াই

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: প্রাণিসম্পদ খাত এখন আর শুধু ঐতিহ্যগত খামার ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভরশীল নয়। প্রযুক্তি, ডেটাভিত্তিক ব্যবস্থাপনা ও স্বয়ংক্রিয় সরঞ্জাম যুক্ত হওয়ায় খামার পরিচালনার ধরণ দ্রুত বদলে যাচ্ছে। উৎপাদন বাড়ানো, রোগনিয়ন্ত্রণ, খরচ কমানো এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আধুনিক স্মার্ট ফার্মিং এখন খামারিদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলেছে।

স্মার্ট ফার্মিংয়ের মূল সুবিধা হলো তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ। ফিড মিক্সার, স্বয়ংক্রিয় পানির সরবরাহ ব্যবস্থা, ডিজিটাল ওজন মাপার যন্ত্র, পশুর দেহতাপমাত্রা মনিটরিং সেন্সর—এসব প্রযুক্তি বড় ও মাঝারি খামারগুলোতে ইতোমধ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে পশুর স্বাস্থ্য পরিস্থিতি খুব দ্রুত জানা যায় এবং সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়। এতে রোগবালাই প্রতিরোধ ও চিকিৎসা দুটোই সহজ হয়।

অনেক খামারে এখন কম্পিউটারাইজড রেকর্ড রাখা হচ্ছে। কোন পশু কতদিনের, কখন টিকা দেওয়া হয়েছে, প্রতিদিন কতখানি খাদ্য গ্রহণ করছে বা দুধ উৎপাদন করছে—এসব তথ্য সংরক্ষণ করা হলে উৎপাদনশীলতা বিশ্লেষণ করা সহজ হয়। বড় খামারগুলো ডেটা অ্যানালিটিকস ব্যবহার করে কোন পশু সবচেয়ে লাভজনক, কোন খাদ্য সবচেয়ে উপযোগী, কোন মৌসুমে উৎপাদন বেশি—এসবও নির্ণয় করছে।

কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তিতে (AI) উন্নতি হওয়ার ফলে উন্নত জাতের সাথে দেশীয় জাতের সফল সংকরায়ন এখন অনেক বেশি কার্যকর। জেনেটিক উন্নয়নের জন্য সেমেন সোর্টিং প্রযুক্তি ব্যবহার করলে গরুর উৎপাদনশীলতা, দুধের পরিমাণ এবং রোগ সহনশীলতা বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি ল্যাবভিত্তিক জেনেটিক পরীক্ষা পশুর ভবিষ্যৎ সক্ষমতা মূল্যায়নে সহায়ক হচ্ছে।

ড্রোন প্রযুক্তিও এখন কিছু অঞ্চলে ব্যবহৃত হচ্ছে। বড় খামারে পশুর চলাফেরা পর্যবেক্ষণ, জমির ঘাস পর্যবেক্ষণ এবং পানি–খাদ্যের অবস্থা বোঝার জন্য ড্রোন দ্রুত ও কার্যকর সমাধান দিচ্ছে। এতে শ্রম খরচ কমছে এবং সময় বাঁচছে।
এ ছাড়া স্বয়ংক্রিয় দুধ দোয়ার মেশিন, ফিড ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার এবং মোবাইল অ্যাপভিত্তিক রোগ নির্ণয় সুবিধা খামারিদের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে। বিশেষত তরুণ উদ্যোক্তারা প্রযুক্তি-নির্ভর খামার গড়ে তুলতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

তবে প্রযুক্তির প্রসার এখনো সমানভাবে সব অঞ্চলে হয়নি। ব্যয়বহুল যন্ত্রপাতি, প্রশিক্ষণের অভাব ও ইন্টারনেট সুবিধার সীমাবদ্ধতা অনেক ছোট খামারিকে এই সুবিধার বাইরে রেখে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকারি পর্যায়ে প্রশিক্ষণ, ভর্তুকি এবং প্রযুক্তির সহজলভ্যতা বাড়ালে স্মার্ট ফার্মিং দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে এবং উৎপাদন আরও বাড়বে।

শিল্প খাতের মতো প্রাণিসম্পদেও প্রযুক্তি বিপ্লব ভবিষ্যতের খামার ব্যবস্থাপনা নতুনভাবে গড়ে দেবে—এমনটাই মনে করছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো। খামারি, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি উদ্যোগ একত্রে এগোলে বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ খাত আরও আধুনিক ও স্থিতিশীল হবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন।