২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে চায়ের বাজারে চাহিদা-বিপণনের জোয়ার
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: বিশ্বজুড়ে ২০২৪ সালে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে চা উৎপাদন কিছুটা কমলেও, ভোক্তা চাহিদা ও আন্তর্জাতিক রপ্তানি বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। বিশ্ব চা সংস্থা এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এ বছর বিশ্বব্যাপী চায়ের উৎপাদন দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬.১ মিলিয়ন টনে, যা গত বছরের তুলনায় ২.৩% কম।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত, চীন ও কেনিয়ায় খরা ও অকালবৃষ্টির কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। তবে অপরদিকে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় গ্রিন টি ও হেরবাল চায়ের জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
চীনে চাহিদা বেড়েছে ৪.৫%, যেখানে শহরাঞ্চলে ‘ওয়েলনেস’ ও ‘অর্গানিক ড্রিংক’-এর চাহিদায় গ্রিন টি ও হোয়াইট টি বিক্রি রেকর্ড ছুঁয়েছে।
ভারতে চায়ের চাহিদা অভ্যন্তরীণ বাজারে ৩.৮% বেড়েছে, যদিও উৎপাদনে হ্রাস দেখা গেছে আসাম ও দার্জিলিং অঞ্চলে।
কেনিয়ায় উৎপাদন কমে গেলেও, রপ্তানি আয় বেড়েছে ৫%, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের নতুন বাজার ধরার ফলে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় চা রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে চীন, ভারত, কেনিয়া এবং শ্রীলঙ্কা এখনও শীর্ষে রয়েছে। তবে তুরস্ক, ইরান ও ভিয়েতনাম নতুন করে চায়ের রপ্তানি তালিকায় গুরুত্ব পাচ্ছে।
বিপণন কৌশলেও বড় পরিবর্তন এসেছে ২০২৪ সালে। আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, সাবস্ক্রিপশন মডেল এবং হেলথ কনসাস প্যাকেজিং-এ বেশি জোর দিচ্ছে।
বিশেষ করে Gen Z ও মিলেনিয়াল শ্রেণিকে লক্ষ্য করে তৈরি হয়েছে ‘চা-ফ্লেভারড কোল্ড ব্রিউ’, ‘ম্যাচা ল্যাটে’ ও ‘ইনফিউশান বক্স’।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় চা বিপণনকারী সংস্থা Unilever Tea Brands (Lipton, PG Tips) জানিয়েছে, তাদের অনলাইন বিক্রি ২০২৪ সালের প্রথম তিন প্রান্তিকে ১২% বৃদ্ধি পেয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান চা উৎপাদনকারী দেশগুলো ২০২৪ সালে বৈরী আবহাওয়া ও উচ্চ উৎপাদন খরচের কারণে চা উৎপাদনে কিছুটা ভাটা দেখেছে, তবে অভ্যন্তরীণ এবং রপ্তানি চাহিদা উর্ধ্বমুখী থেকেছে।
🇮🇳 ভারত:উৎপাদন: ২০২৪ সালে ১.২৫ মিলিয়ন টন (প্রায় ৩.৫% হ্রাস)। আসাম ও দার্জিলিংয়ে খরার প্রভাব পড়েছে।চাহিদা: অভ্যন্তরীণ চা খাওয়া ৩.৮% বেড়েছে, বিশেষত দক্ষিণ ভারতে গ্রিন টি ও হেলথ ফ্লেভার্ড চায়ের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে।রপ্তানি: ২.৮% বৃদ্ধি, প্রধান গন্তব্য: ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, রাশিয়া।
🇧🇩 বাংলাদেশ:উৎপাদন: ৯৬.৫ মিলিয়ন কেজি (প্রায় ২% হ্রাস)। শ্রীমঙ্গল ও পঞ্চগড় অঞ্চলে জলবায়ু সমস্যার প্রভাব।চাহিদা: প্রতি বছর অভ্যন্তরীণ চাহিদা প্রায় ৯০–৯৫ মিলিয়ন কেজি, শহরাঞ্চলে গ্রিন টি, লেমন টি ইত্যাদির জনপ্রিয়তা বেড়েছে।রপ্তানি: সীমিত হলেও ২০২৪ সালে মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ায় ৫% রপ্তানি বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে।
🇱🇰 শ্রীলঙ্কা:উৎপাদন: ২৬৫ মিলিয়ন কেজি (৪% হ্রাস), বিশেষ করে সেন্ট্রাল হাইল্যান্ডসে শ্রমিক সংকট ও বৃষ্টিপাতের অনিয়মিততা সমস্যার মূল।রপ্তানি: বিশ্বব্যাপী সিলন টি’র ব্র্যান্ড ভ্যালু ধরে রেখেছে, ২০২৪ সালে রপ্তানি আয় প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার।চাহিদা: দেশে গ্রিন টি ও হেরবাল ফিউশন চায়ের চাহিদা ৭% বেড়েছে।
🇳🇵 নেপাল: উৎপাদন: প্রায় ২৫ মিলিয়ন কেজি, মূলত পূর্বাঞ্চলের ইলাম জেলায়।রপ্তানি: ভারত ও ইউরোপে হাই-এন্ড ‘হিমালয়ান টি’ রপ্তানির চাহিদা বাড়ছে।বিপণন কৌশল: ক্ষুদ্র উৎপাদকদের নিয়ে সহকারী সংস্থা গঠনের চেষ্টা চলছে।
📊 দক্ষিণ এশিয়ায় বাজার প্রবণতা (২০২৪):
দেশ | উৎপাদন (মিলিয়ন কেজি) | উৎপাদন প্রবৃদ্ধি | অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি | রপ্তানি প্রবৃদ্ধি |
---|---|---|---|---|
ভারত | ১,২৫০ | -৩.৫% | +৩.৮% | +২.৮% |
বাংলাদেশ | ৯৬.৫ | -২% | +২.২% | +৫% |
শ্রীলঙ্কা | ২৬৫ | -৪% | +৩.৫% | +৪.৫% |
নেপাল | ২৫ | স্থিতিশীল | +১.৭% | +৩% |