Home চট্টগ্রাম চিটাগাং চেম্বারে লতিফ-ফারুক যুগ শেষ, আসছে কি স্বচ্ছতা?

চিটাগাং চেম্বারে লতিফ-ফারুক যুগ শেষ, আসছে কি স্বচ্ছতা?

 বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (সিসিসিআই)-এর সেক্রেটারি জেনারেল প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফারুককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ২০ মে থেকে তিনি এই পদে আর নেই। দীর্ঘদিন ধরে চেম্বারের ভেতরে জমে থাকা ক্ষোভ, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

চিটাগাং চেম্বারের ইতিহাসে কোন প্রধান নির্বাহির অপসারণ দাবিতে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বিক্ষোভ বা এভাবে  কোন শীর্ষ নির্বাহির অব্যাহতি নেয়ার ঘটনা এই প্রথম।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিক্ষোভের মুখে প্রকৌশলী ফারুক গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে চেম্বারের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার কার্যালয়ে আর যাননি। তিনি অনিয়মিতভাবে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে প্রশাসকের দপ্তরে উপস্থিত হতেন, তবে ১ ডিসেম্বরের পর সেখানেও আর যাননি।

চেম্বারের অভ্যন্তরে দীর্ঘদিনের অস্থিরতা, স্বজনপ্রীতি এবং অনিয়মের অভিযোগে তোলপাড় চলছিল। ফারুক তার সময়ে দফায় দফায় নিজের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েছেন, অথচ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছিলেন অবহেলিত। তাদের ন্যায্য প্রাপ্য পদোন্নতি, চাকরি স্থায়ীকরণ বা আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হতো। কেবল তা নয়, চেম্বারে যাদেরকে প্রতিদ্বন্ধী ভেবেছেন, বা যারা তার প্রতিপক্ষ ছিলেন কৌশলে তাদেরকে বিদায় করেছেন অথবা চাকরি ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

স্বৈরাচারী সরকারের সময় কেউ মুখ খুলতে না পারলেও, ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর তাদের সেই ক্ষোভ বিস্ফোরিত হয়।

প্রকৌশলী ফারুকের চেম্বারে পদোন্নতির ইতিহাস বিতর্কিত। চেম্বারের ‘মেমোরেন্ডাম অ্যান্ড আর্টিকেলস অব এসোসিয়েশন’-এ ‘মহাসচিব’ বা ‘সেক্রেটারি জেনারেল’ নামের কোনো পদ না থাকলেও তিনি নিজেকে সেই পদে পদোন্নতি নেন। নিয়ম অনুযায়ী এক বোর্ড সভার কার্যবিবরণী পরবর্তী সভায় অনুমোদনের পরই কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু তিনি সেই নিয়ম লঙ্ঘন করে বোর্ড সভার অনুমোদনের আগেই নিজের পদোন্নতির আদেশ স্বাক্ষর করিয়ে নেন।

এই প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফারুক এক সময় চেম্বারের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার প্রকল্পে কাজ করতেন। চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও স্বৈরাচারী সরকারের ঘনিষ্ঠ সাবেক সাংসদ এম এ লতিফের ছত্রছায়ায় তিনি চেম্বারে প্রবেশ করেন। লতিফের ছায়াতলে থেকেই তিনি কার্যত পুরো চেম্বার প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পরিচালনা বোর্ড ছিল নিছক আনুষ্ঠানিক; বাস্তব নিয়ন্ত্রণে ছিলেন লতিফ ও তার অনুগত এই ফারুক। অভিযোগ রয়েছে, লতিফের নির্দেশেই চেম্বারের প্রায় সব প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হতো, আর তার প্রধান সহযোগী ছিলেন ফারুক।

চেম্বারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তখন সভা, সমাবেশ ও মানববন্ধনের মাধ্যমে ফারুকের অপসারণ দাবি করেন। ৩ সেপ্টেম্বর চেম্বার এমপ্লয়ীজ ইউনিয়ন মানববন্ধন করে এবং ৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ফারুকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেয়। এতে বলা হয়, তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্নভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানি করেছেন, নিজের পছন্দের লোকদের অন্যায়ভাবে চাকরি স্থায়ী করেছেন ও বেতন বাড়িয়েছেন।

গত ১৭ মার্চ মোহাম্মদ ফারুকও কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে।

এর আগে , ১৬ অক্টোবর ‘বঞ্চিত ব্যবসায়ী ফোরাম’-এর ব্যানারে চট্টগ্রামের একদল ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি পত্র দেন। এতে বলা হয়, ফারুক তার পদে বহাল থাকলে চেম্বারে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।

চেম্বার পরিচালনা বোর্ড ২ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করে। এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চেম্বারে প্রশাসক হিসেবে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশাকে নিয়োগ দেয়।

ফারুকের বিরুদ্ধে জমা দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তদন্ত করে । এরপর ৪ মে মন্ত্রণালয় বিধি অনুযায়ী তাকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত জানায় এবং ২০ মে থেকে তা কার্যকর করা হয়।

চেম্বারের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছেন, এই অব্যাহতির মাধ্যমে একটি দীর্ঘদিনের অস্বচ্ছ অধ্যায়ের ইতি ঘটল। এখন দেখার বিষয়, নতুন নেতৃত্বে চেম্বার কতটা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পথে হাঁটে।

📣 আপনার মতামত দিন:
চেম্বার প্রশাসনে এই পরিবর্তন কি কাঙ্ক্ষিত সংস্কারের সূচনা করবে, নাকি পুরনো শেকড় থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন হবে? নিচে কমেন্টে জানিয়ে দিন আপনার মতামত।
আপনার ভাবনা গুরুত্বপূর্ণ। শেয়ার করুন প্রতিবেদনটি।