Home First Lead চিটাগাং চেম্বার নির্বাচন: স্বচ্ছতা নাকি আবারও রাহুর গ্রাস?

চিটাগাং চেম্বার নির্বাচন: স্বচ্ছতা নাকি আবারও রাহুর গ্রাস?

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: গত কয়েকদিন ধরে চিটাগাং চেম্বার ( সিসিসিআই)  নির্বাচনের প্রস্তুতির খবর চাউর হয়েছিল ব্যবসায়ী মহলে। তা নিয়ে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা তাদের মধ্যে।  এ অবস্থার মধ্যে আজ সোমবার ঘোষণা করা হলো নির্বাচনী তপসিল। 

তবে আশার পাশাপাশি শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। কারণ, সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশন দখল হয়ে গেছে, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশন ( বিএসএএ ) নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হয়েছে দফায় দফায়। ঠিক একইভাবে একটি নতুন গোষ্ঠী চেম্বারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য তৎপরতা শুরু করেছে। ব্যবসায়ী মহলে গুঞ্জন, এই গোষ্ঠীও অতীতের মতো প্রভাব বিস্তার করে চেম্বারের স্বাধীনতা ও স্বচ্ছতা হ্রাস করার চেষ্টা করতে পারে। ফলে আশাবাদী ব্যবসায়ীদের মধ্যে আবারও সন্দেহ তৈরি হয়েছে যে, চেম্বার কি সত্যিই দীর্ঘমেয়াদে রাহুর গ্রাস থেকে মুক্ত থাকতে পারবে?

প্রিমিয়ার সিমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সিকম গ্রুপের চেয়ারম্যান,  ডেলটা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজেরও শীর্ষ নির্বাহী এবং চিটাগাং চেম্বার ও এফবিসিসিআিই’র প্রাক্তন পরিচালক মো. আমিরুল হক মনে করছেন, চিটাগাং চেম্বারের ভবিষ্যৎ এখন অনেকটাই নির্ভর করছে আসন্ন নির্বাচনের স্বচ্ছতা, অংশগ্রহণমূলক পরিবেশ এবং নতুন নেতৃত্বের সৎ ও কার্যকর ভূমিকার ওপর।

তিনি আশা করেন, এবার আর অতীতের ভুলের পুনরাবৃত্তি হবে না, বরং চেম্বার তার প্রকৃত দায়িত্বে ফিরে এসে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে দৃশ্যমান অবদান রাখবে।

কয়েক দশক ধরে চিটাগাং চেম্বার ছিল বিশেষ একটি প্রভাবশালী চক্রের নিয়ন্ত্রণে। নির্বাচনী প্রক্রিয়া প্রভাবিত করে তারা দীর্ঘসময় ধরে নেতৃত্ব ধরে রাখে। এর ফলে চেম্বারের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা কমে যায়, এবং দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অবদান রাখায় প্রতিষ্ঠানটি শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়। নীতি সহায়তা ও ব্যবসায়ীদের সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে অদক্ষতা ও উদাসীনতার কারণে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা ধীরে ধীরে চেম্বারের প্রতি বিমুখ হয়ে পড়েন। অনেক উদ্যোক্তা মনে করতেন, সিসিসিআই শুধু নামমাত্র একটি সংগঠন হয়ে গেছে, যার কার্যকরী প্রভাব নেই।

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর চিটাগাং চেম্বার দীর্ঘদিনের সেই প্রভাবশালী চক্রের হাত থেকে মুক্ত হয়। ব্যবসায়ী মহলে আবারও প্রত্যাশা জাগে যে সিসিসিআই আগের মতোই বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থ রক্ষা করবে, সরকারের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপ বাড়াবে এবং চট্টগ্রামসহ দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। নতুন নেতৃত্ব এবং স্বচ্ছ নির্বাচনী পরিবেশের মাধ্যমে চেম্বারে নতুন প্রাণ ফিরে আসবে। তারা নীতি প্রণয়ন, আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণ, বন্দর কার্যক্রমের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং শিল্পায়ন ত্বরান্বিত করতে উদ্যোগ নেবে। পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের সমস্যার সমাধানে সরাসরি পদক্ষেপ গ্রহণ ও সরকারের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপ চালিয়ে যাবে।

চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিসিসিআই) বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও প্রভাবশালী বাণিজ্যিক সংগঠন। এর সূচনা ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে। সে সময়ে  চট্টগ্রাম ছিল ব্রিটিশ ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র। স্থানীয় ব্যবসায়ী, আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য একটি সংগঠনের প্রয়োজন দেখা দেয়।

প্রথম দিকে এটি চিটাগাং চেম্বার নামে পরিচিত ছিল। মূল লক্ষ্য ছিল—বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষা, ব্যবসায়ীদের জন্য নীতি সহায়তা, আমদানি-রপ্তানির জটিলতা নিরসন এবং বন্দরভিত্তিক বাণিজ্য উন্নয়ন। স্বাধীনতার পর এটি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি নামে পুনর্গঠিত হয় এবং এখন পর্যন্ত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চেম্বার । চট্টগ্রাম বন্দর দেশের মোট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ পরিচালনা করে, আর সেই বন্দরকেন্দ্রিক বাণিজ্যের বড় অংশের প্রতিনিধিত্ব করে সিসিসিআই। ফলে এ চেম্বারের সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ জাতীয় অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে।