হেলথ ডেস্ক:
চীন স্বাস্থ্যসেবা খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহারকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ২০২৪ সালে বেইজিংয়ের ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক চালু করেন বিশ্বের প্রথম এআই-চালিত ভার্চুয়াল হাসপাতাল ‘এজেন্ট হাসপাতাল’। এটি নিছক কোনো পরীক্ষাগার বা মডেল নয়, বরং একটি কার্যকর চিকিৎসা-পরিসেবা কেন্দ্র, যা দিনে গড়ে ৩,০০০ রোগীকে চিকিৎসা দিতে সক্ষম।
এই ভার্চুয়াল হাসপাতালের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, এখানে কোনো মানব চিকিৎসক নেই। পুরো ব্যবস্থাটি পরিচালিত হয় ১৪ জন এআই-চালিত ভার্চুয়াল ডাক্তার ও ৪ জন ভার্চুয়াল নার্সের মাধ্যমে। রোগীরা অনলাইনে তাদের উপসর্গ জমা দেন এবং অত্যন্ত উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশ্লেষণ করে সেই উপসর্গ থেকে রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা পরিকল্পনা এবং প্রয়োজনীয় ফলো-আপ তৈরি করে। এর ফলে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা কিংবা চিকিৎসকের সময় মেলানোর সমস্যার অবসান ঘটে।
পরীক্ষামূলক ব্যবহারে দেখা গেছে, ‘এজেন্ট হাসপাতাল’-এর এআই চিকিৎসকরা প্রায় ৯৩.০৬ শতাংশ নির্ভুলতা অর্জন করেছে, যা অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের সমমানের চিকিৎসা দক্ষতার সঙ্গে তুলনীয়। চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোবটিক বুদ্ধিমত্তা যেভাবে রোগের ইতিহাস, লক্ষণ এবং আধুনিক চিকিৎসা নির্দেশনা বিশ্লেষণ করে চিকিৎসার পরিকল্পনা তৈরি করে—তা প্রথাগত ব্যবস্থার তুলনায় অনেক বেশি দ্রুত ও তথ্যনির্ভর।
এই হাসপাতাল শুধু সাধারণ চিকিৎসা সেবায় সীমাবদ্ধ নয়। এতে রয়েছে সাইকোথেরাপি, হৃদরোগ ব্যবস্থাপনা, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, গর্ভাবস্থার পরিচর্যার মতো জটিল বিষয়েও বিশেষজ্ঞ এআই ইউনিট। প্রতিটি ইউনিট আলাদা অ্যালগরিদম ও ক্লিনিক্যাল গাইডলাইন অনুসরণ করে কাজ করে।
ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানান, ‘এজেন্ট হাসপাতাল’ এমনভাবে তৈরি হয়েছে যেন ভবিষ্যতের প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা ঘাটতি পূরণে এটি কার্যকর হতে পারে। সেখানে যেখানে ভালো চিকিৎসকের অভাব, এই প্রযুক্তি ভার্চুয়াল চ্যানেলের মাধ্যমে রোগীর সেবা নিশ্চিত করতে পারবে।
তবে প্রযুক্তির এই বিপ্লব নিয়েও রয়েছে বিতর্ক ও শঙ্কা। অনেকেই বলছেন, সম্পূর্ণরূপে রোবটের ওপর নির্ভর করা কি নিরাপদ? যদি কোনো ভুল হয়? এসব প্রশ্ন থেকে যায়। তবে ছিংহুয়ার গবেষকরা জানাচ্ছেন, প্রতিটি সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছে পর্যাপ্ত ক্লিনিক্যাল ডেটা, ন্যূনতম ঝুঁকি যাচাই ও নিয়মিত আপডেট।
বিশ্বজুড়ে এআই স্বাস্থ্যসেবা যে অচিরেই গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হতে চলেছে, তা এই হাসপাতালই প্রমাণ করে দিচ্ছে। আর উন্নয়নশীল দেশগুলো, বিশেষত বাংলাদেশ, এই মডেল থেকে শিখে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার ভবিষ্যত নির্মাণে পথপ্রদর্শক ধারণা গ্রহণ করতে পারে।
◊আপনার মতামত জানান:
ভবিষ্যতের এমন এআই হাসপাতাল কি বাংলাদেশেও সম্ভব? মন্তব্য করুন আপনার মতামত দিয়ে।
শেয়ার করুন প্রতিবেদনটি:
প্রযুক্তির এমন অগ্রগতি সম্পর্কে জানুক আরও মানুষ,বন্ধুদের সঙ্গে এই প্রতিবেদন শেয়ার করুন।