আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চীনের ১০০ শীর্ষ পলাতক দুর্নীতিবাজের তালিকাভুক্ত সাবেক ব্যবসায়ী চৌ জিংহুয়াকে থাইল্যান্ড থেকে প্রত্যর্পণ করে দেশে ফিরিয়ে এনেছে চীন। দেশটির শীর্ষ দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা জাতীয় তদারকি কমিশন জানিয়েছে, চীন ও থাইল্যান্ডের আইন প্রয়োগকারী ও বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের যৌথ প্রচেষ্টায় এ প্রত্যর্পণ সম্ভব হয়েছে।
৫৫ বছর বয়সী চৌ জিংহুয়া ইউনান প্রদেশের একটি বিনিয়োগ কোম্পানির উপ-মহাব্যবস্থাপক ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে ২০১২ সালে ইন্টারপোল ‘রেড নোটিশ’ জারি করেছিল। এর পরপরই তিনি পালিয়ে থাইল্যান্ডে আশ্রয় নেন এবং দীর্ঘ এক দশক সেখানে আত্মগোপনে ছিলেন।
এখন পর্যন্ত ১০০ জন পলাতক দুর্নীতিবাজের মধ্যে এশিয়ায় পালিয়ে থাকা সবার প্রত্যর্পণ নিশ্চিত করেছে চীন। চৌ জিংহুয়া এই তালিকায় ৬৩তম ব্যক্তি, যাকে ফিরিয়ে আনা হলো। ফলে এশীয় দেশগুলোতে পলাতক থাকা কেউই আর ওই তালিকায় নেই।
চীনের বিখ্যাত আইনবিশারদ অধ্যাপক ঝাং লেই মনে করেন, চৌ-এর প্রত্যর্পণ চীনের আইনের শাসনের উন্নয়ন ও দুর্নীতিবিরোধী সংকল্পের প্রমাণ। তিনি বলেন, “এই ঘটনা পলাতকদের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা—তারা যত দূরেই পালাক না কেন, চীন তাদের খুঁজে বের করবে।”
চৌ জিংহুয়ার প্রত্যর্পণকে চীন সরকারের ‘স্কাই নেট’ অভিযানের উল্লেখযোগ্য সাফল্য বলেও বিবেচনা করা হচ্ছে। ২০১৫ সালের মার্চে শুরু হওয়া এই অভিযান দুর্নীতিগ্রস্ত পলাতকদের খোঁজা, অবৈধ সম্পদ পুনরুদ্ধার এবং সীমান্ত পেরিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের লক্ষ্য নিয়ে চালু হয়েছিল।
কমিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, স্কাই নেট অভিযানে এখন পর্যন্ত ১২০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চল থেকে ১৪,০০০-এর বেশি পলাতককে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ৩,০০০ জন সরকারি কর্মকর্তা। উদ্ধার করা হয়েছে ৬৬.৬ বিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ৯.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) সমমূল্যের অবৈধ সম্পদ।
তবে চ্যালেঞ্জ এখনও রয়ে গেছে। ১০০ জনের তালিকায় থাকা অবশিষ্ট ৩৭ জন পলাতক বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে অবস্থান করছেন। চীনের সঙ্গে এই চার দেশের আনুষ্ঠানিক প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকায় এদের ফিরিয়ে আনা এখনও কঠিন হয়ে আছে।
বেইজিং নরমাল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইয়াং চাও বলেন, “কিছু দেশ বিনিয়োগ অভিবাসনের শর্ত সহজ করে দিয়েছে, যা দুর্নীতিপরায়ণ পলাতকদের পালিয়ে গিয়ে সম্পদ স্থানান্তরের সুযোগ করে দিচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “এটা শুধু চীনের জন্য নয়, এসব গন্তব্য দেশেও দুর্নীতির বিস্তার ঘটাতে পারে।”
চীন ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দুর্নীতিবাজদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় অগ্রাহ্য করার একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছে এবং জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশন ও দ্বিপাক্ষিক বিচার সহায়তা চুক্তির আওতায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
আপনার মতামত জানাতে ও প্রতিবেদনটি শেয়ার করতে ভুলবেন না। দুর্নীতিবিরোধী বিশ্বপ্রয়াসে এমন উদ্যোগকে আপনার বন্ধুরাও জানুক।