মোজাফফর রাহমান বাদল, কুষ্টিয়া: চার বছর ধরে বন্ধ থাকা কুষ্টিয়ার ঐতিহ্যবাহী কুষ্টিয়া সুগার মিল নতুন করে চালুর সম্ভাবনায় আবার আলোচনায় এসেছে।
২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে বিএসএফআইসি কর্তৃপক্ষ ৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল বন্ধের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে, যার মধ্যে কুষ্টিয়ার জগতি সুগার মিলও ছিল। মিলটি বন্ধের পেছনে বড় অঙ্কের আর্থিক লোকসান ও দীর্ঘমেয়াদি আধুনিকায়নের পরিকল্পনা প্রধান কারণ হিসেবে দেখানো হয়। কিন্তু এর পর থেকে মিলের যন্ত্রাংশ অচল হয়ে পড়ে, আর বিশাল মূল্যের অবকাঠামো ঝুঁকির মুখে পড়ে।
তবে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বিএসএফআইসি ও বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়, যার মাধ্যমে মিল আধুনিকায়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে আইনগত জটিলতার কারণে সে চুক্তি বাতিল করে করে দেয়া হয়।
গত ফেব্রুয়ারিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক শারকারা ইন্টারন্যাশনাল থাইল্যান্ডের সুটেক ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি এবং জাপানের মারুবেনি প্রোটেকস করপোরেশন বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ে যৌথ প্রস্তাব জমা দেয়। এতে তারা রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলসমূহ পুনর্গঠনের জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা, আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং ব্যবস্থাপনা পরিষেবা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠি অনুযায়ী, বিএসএফআইসি ও বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের যৌথ উদ্যোগে অথবা সম্পূর্ণ সরকারি মালিকানায় মিল পুনরায় চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে বিদেশি সরঞ্জাম ও নকশা কেনার জন্য জাপানের জেবিআইসি এবং থাইল্যান্ডের এক্সিম ব্যাংক ঋণ দেবে, আর স্থানীয় নির্মাণ ও অবকাঠামো কাজে অর্থায়ন করবে বাংলাদেশ সরকার।
স্থানীয় পর্যায়ে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মিল পুনরায় চালুর লক্ষ্যে একাধিক বৈঠক করেছেন। সম্প্রতি এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, মিলের কোনো যন্ত্রপাতি অন্যত্র সরানো যাবে না এবং এর সংরক্ষণ ও পুনর্গঠনের কাজে এগিয়ে যেতে হবে। এ ছাড়া জেলা বিএনপি ও শ্রমিক-কৃষক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও পুনরায় চালুর দাবিতে নানা কর্মসূচি চলছে।
চিনিকল ঘিরে একসময় হাজারো শ্রমিক ও আখচাষীর জীবিকা নির্বাহ হতো। মিলটি পুনরায় চালু হলে শুধু কুষ্টিয়া নয়, সমগ্র দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন স্থানীয় অর্থনীতিবিদরা।
১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই রাষ্ট্রায়ত্ত মিলটি বাংলাদেশ সুগার অ্যান্ড ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) আওতাধীন। প্রায় ২২১.৪৬ একর জায়গাজুড়ে স্থাপিত মিল কমপ্লেক্সে রয়েছে চিনি কারখানা, বাণিজ্যিক খামার, জৈব সার উৎপাদন প্ল্যান্ট, প্রশাসনিক ভবন, আবাসন ব্যবস্থা, দুটি বিশাল গুদামঘর, বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র, অভ্যন্তরীণ সড়ক ব্যবস্থা এবং গভীর নলকূপসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। কুষ্টিয়া বাইপাস সংলগ্ন যশোর-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে অবস্থিত মিলটির যাতায়াত ব্যবস্থাও চমৎকার।
প্রতীক্ষা এখন বাস্তবায়নের। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে নেওয়া এই উদ্যোগ জগতি সুগার মিলকে আবার কর্মচাঞ্চল্যে ফিরিয়ে আনতে পারে কিনা, সেদিকেই তাকিয়ে আছেন কুষ্টিয়ার মানুষ।