হেলথ ডেস্ক:
জরায়ু ফাইব্রয়েড হলো জরায়ুর পেশির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রজননক্ষম বয়সের প্রতি ৩ জন নারীর মধ্যে অন্তত ২ জন জীবনের কোনো না কোনো সময়ে এই সমস্যায় আক্রান্ত হন। তবে সঠিক তথ্যের অভাবে অনেকেই একে অবহেলা করেন।
১. লক্ষণ ও উপসর্গ
ফাইব্রয়েড সবসময় লক্ষণ প্রকাশ করে না। তবে টিউমারের আকার ও অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে নিম্নলিখিত সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে:
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ: মাসিকের সময় প্রচুর রক্তপাত এবং স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিদিন স্থায়ী হওয়া।
তীব্র ব্যথা: তলপেটে ভারী বোধ হওয়া এবং মাসিকের সময় অসহ্য মোচড়ানো ব্যথা।
ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ: টিউমারটি মূত্রথলির ওপর চাপ দিলে বারবার প্রস্রাবের প্রয়োজন হয়।
কোমর ও পায়ে ব্যথা: স্নায়ুর ওপর চাপের ফলে পিঠ বা পায়ের পেছনের দিকে ব্যথা হতে পারে।
২. বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি ও গর্ভাবস্থায় প্রভাব
সব ফাইব্রয়েড বন্ধ্যাত্বের কারণ নয়, তবে কিছু নির্দিষ্ট ফাইব্রয়েড নিম্নলিখিত জটিলতা তৈরি করতে পারে:
ভ্রূণ স্থাপনে বাধা: ফাইব্রয়েড যদি জরায়ুর ভেতরে (Submucosal) থাকে, তবে তা ভ্রূণকে জরায়ুর দেয়ালে বসতে বাধা দেয়।
ফ্যালোপিয়ান টিউব বন্ধ হওয়া: জরায়ুর প্রবেশমুখ বা টিউবের মুখ বন্ধ করে দিয়ে শুক্রাণুর চলাচলে বাধা দিতে পারে।
গর্ভপাত: গর্ভাবস্থায় ফাইব্রয়েডের আকার বড় হলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৩. জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে আক্রান্ত নারীরা দীর্ঘমেয়াদী অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতায় ভোগেন। এর ফলে সবসময় ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং শ্বাসকষ্ট অনুভূত হয়, যা কর্মজীবন ও পারিবারিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৪. রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পদ্ধতি
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে ফাইব্রয়েডের কার্যকর সমাধান রয়েছে। রোগীর বয়স এবং তিনি ভবিষ্যতে সন্তান নিতে চান কি না, তার ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা নির্ধারণ করা হয়।
| পদ্ধতির ধরন | বিবরণ |
| ওষুধ | হরমোনাল পিল বা ইনজেকশনের মাধ্যমে রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ ও টিউমারের আকার কমানোর চেষ্টা করা হয়। |
| মায়োমেকটমি | জরায়ু ঠিক রেখে কেবল টিউমারটি অপারেশন করে অপসারণ করা (যারা সন্তান নিতে চান তাদের জন্য উপযুক্ত)। |
| হিস্টেরেক্টমি | সমস্যা খুব জটিল হলে বা বয়স বেশি হলে সম্পূর্ণ জরায়ু অপসারণ করা। |
| ইউটেরাইন আর্টারি এমবোলাইজেশন | অপারেশনের বদলে ইনজেকশনের মাধ্যমে টিউমারের রক্ত সঞ্চালন বন্ধ করে একে শুকিয়ে ফেলা। |
ফাইব্রয়েড মানেই জরায়ু কেটে ফেলা নয়। সময়মতো শনাক্ত করতে পারলে জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং সাধারণ চিকিৎসার মাধ্যমেই সুস্থ থাকা সম্ভব। তলপেটে দীর্ঘমেয়াদী অস্বস্তি বা অতিরিক্ত মাসিক হলে লজ্জা না পেয়ে দ্রুত একজন স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞের (Gynecologist) পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
এ ধরণের আরও গুরুত্বপূর্ণ আপডেট পেতে ভিজিট করুন www.businesstoday24.com










