Home আন্তর্জাতিক জার্মানির ডায়েরি: শ্রমবাজারে সম্ভাবনার দরজা খুলছে দক্ষিণ এশীয়দের জন্য

জার্মানির ডায়েরি: শ্রমবাজারে সম্ভাবনার দরজা খুলছে দক্ষিণ এশীয়দের জন্য

অরিন্দম বণিক, বার্লিন : জার্মানি ইউরোপের অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম, যেখানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শ্রমশক্তির ঘাটতি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা, তথ্যপ্রযুক্তি, প্রকৌশল ও কারিগরি খাতে অভিজ্ঞ পেশাজীবীদের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ভারত ও বাংলাদেশের মতো দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর দক্ষ কর্মীদের জন্য তৈরি হচ্ছে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার।

জার্মান সরকারের একাধিক নীতিগত সংস্কার এবং অভিবাসন সহজীকরণ উদ্যোগের ফলে এখন বিদেশি নাগরিকদের জন্য শ্রমবাজারে প্রবেশ অনেক সহজ হয়েছে। “Skilled Immigration Act”-এর আওতায় জার্মানি দক্ষ পেশাজীবীদের জন্য ভিসা ও আবাসিক অনুমতির প্রক্রিয়া সরল করেছে। এই আইনের সুবিধায় ভারতীয় ও বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞরা এখন জার্মানিতে সহজে চাকরি খুঁজে নিতে পারছেন।

ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কর্মীরা ইতিমধ্যেই জার্মানির সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতে বড় ভূমিকা রাখছে। হাইডারাবাদ, বেঙ্গালুরু বা পুনের অনেক সফটওয়্যার প্রকৌশলী বর্তমানে বার্লিন, মিউনিখ বা ফ্র্যাঙ্কফুর্টে কাজ করছেন আন্তর্জাতিক কোম্পানিতে। এদের অনেকেই চাকরির পাশাপাশি পরিবারসহ দীর্ঘমেয়াদে বসবাসের পরিকল্পনাও করছেন।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যদিও এখনো সংখ্যায় তুলনামূলক কম। তবে বাংলাদেশের নার্স, চিকিৎসক, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, ও কারিগরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের জন্য জার্মানির দরজা ক্রমেই উন্মুক্ত হচ্ছে। বিশেষ করে নার্সিং সেক্টরে জার্মানি বড় পরিমাণে বিদেশি কর্মী নিচ্ছে, যেখানে ভারত ও ফিলিপাইনের পাশাপাশি বাংলাদেশের নামও উঠে আসছে।

একটি চ্যালেঞ্জের জায়গা হচ্ছে ভাষা। জার্মান ভাষা জানা ছাড়া কর্মসংস্থানে প্রবেশ কঠিন, বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও সেবাখাতে। তবে এখন অনেক জার্মান প্রতিষ্ঠান নিজেরাই ভাষা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে, আবার অনেক বাংলাদেশি তরুণ ইতিমধ্যেই ঢাকায় বা অনলাইনে জার্মান ভাষা শিখে নিচ্ছেন।

ছবি সংগৃহীত

উল্লেখযোগ্য যে, বার্লিন, হামবুর্গ, কোলনসহ বড় শহরগুলোতে ইতিমধ্যে দক্ষিণ এশীয় পেশাজীবীদের এক শক্তিশালী কমিউনিটি গড়ে উঠেছে। তারা শুধু পেশাগত সাফল্যেই নয়, জার্মান সমাজে নিজেদের সংস্কৃতি, খাদ্য, উৎসব এবং কর্মক্ষমতায় সম্মানজনক জায়গা করে নিচ্ছেন।

তবে প্রতিকূলতাও রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে জার্মান প্রশাসনের বুরোক্রেসি, দীর্ঘস্থায়ী কাগজপত্রের প্রক্রিয়া ও স্থানিক বৈষম্য পেশাজীবীদের মানসিক চাপ বাড়ায়। পাশাপাশি বিদেশি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে একাংশের সামাজিক অবিশ্বাস বা সাংস্কৃতিক দূরত্বও সমস্যা তৈরি করে।

তবু সামগ্রিকভাবে বলা যায়, জার্মানির শ্রমবাজারে দক্ষ পেশাজীবীদের প্রবেশ ক্রমেই স্বাভাবিক ও গতিশীল হয়ে উঠছে। ভারতীয়দের পথ ধরে এখন বাংলাদেশের তরুণরা বৈশ্বিক মানের চাকরির জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন, যা আগামীতে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা উভয়দিকেই বড় অবদান রাখতে পারে।